পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१७ রবীন্দ্র-রচনাবলী মস্কেী স্থান রাশিয়া। দৃশু, মস্কোঁয়ের উপনগরীতে একটি প্রাসাদভবন। জানলার ভিতর দিয়ে চেয়ে দেখি, দিকৃপ্রাস্ত পর্যন্ত অরণ্যভূমি, সবুজ রঙের ঢেউ উঠেছে— ঘন সবুজ, ফিকে সবুজ, বেগনির সঙ্গে মেশামেশি সবুজ, হলদের-আমেজ-দেওয়া সবুজ। বনের শেষসীমায় বহু দূরে গ্রামের কুটিয়শ্রেণী। বেলা প্রায় দশটা, আকাশে স্তরে স্তরে মেঘ করেছে, অবৃষ্টিসংরম্ভ সমারোহ, বাতাসে ঋজুকায়া পপলার গাছের শিখরগুলি দোদুল্যমান। মস্কোঁয়েতে কয়দিন যে হোটেলে ছিলুম তার নাম গ্র্যান্ড হোটেল। বাড়িটা মস্ত, কিন্তু অবস্থা অতি দরিদ্র ৷ যেন ধনীর ছেলে দেউলে হয়ে গেছে। সাবেক কালের সাজসজ্জা কতক গেছে বিকিয়ে, কতক গেছে ছিড়ে ; তালি দেওয়ারও সঙ্গতি নেই ; ময়লা হয়ে আছে, ধোবার বাড়ির সম্পর্ক বন্ধ। সমস্ত শহরেরই অবস্থা এইরকম— একান্ত অপরিচ্ছন্নতার ভিতর দিয়েও নবাবী আমলের চেহারা দেখা যাচ্ছে, যেন ছেড়া জামাতেও সোনার বোতাম লাগানো, যেন ঢাকাই ধুতি রিফু-করা । আহারে ব্যবহারে এমন সর্বব্যাপী নিধনতা যুরোপের আর কোথাও দেখা যায় না। তার প্রধান কারণ, আর-আর সব জায়গায় ধনীদরিদ্রের প্রভেদ থাকাতে ধনের পুঞ্জীভূত রূপ সব চেয়ে বড়ো করে চোখে পড়ে— সেখানে দারিদ্র্য থাকে যবনিকার আড়ালে নেপথ্যে ; সেই নেপথ্যে সব এলোমেলো, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর, দুঃখে দুর্দশায় দুষ্কর্মে নিবিড় অন্ধকার । কিন্তু বাইরে থেকে গিয়ে আমরা যেখানে বাসা পাই সেখানকার জানলা দিয়ে যা-কিছু দেখতে পাই সমস্তই স্বভত্র, শোভন, স্বপরিপুষ্ট । এই সমৃদ্ধি যদি সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যেত তা হলে তখনই ধরা পড়ত, দেশের ধন এত কিছু বেশি নয় যাতে সকলেরই ভাত কাপড় যথেষ্ট পরিমাণে জোটে। এখানে ভেদ নেই বলেই ধনের চেহারা গেছে ঘুচে ; দৈন্তেরও কুত্ৰত নেই, আছে অকিঞ্চলত। দেশ-জোড়া এই অধন আর কোথাও দেখি নি বলেই প্রথমেই এটা আমাদের খুব চোখে পড়ে। অন্ত দেশে যাদের আমরা জনসাধারণ বলি এখানে তারাই একমাত্র । মন্ধেীয়ের রাস্তা দিয়ে নানা লোক চলেছে। কেউ ফিটফাট নয়, দেখলেই বোঝা যার অবকাশভোগীর দল একেবারে অস্তধান করেছে। সকলকেই স্বহস্তে কাজকর্ম করে দিনপাত করতে হয়, বাবুগিরির পালিশ কোনো জায়গাতেই নেই। ডাক্তার পেট্রোত বলে এক ভদ্রলোকের বাড়ি যেতে হয়েছিল, তিনি এখানকার একজন সম্মালী লোক, উচ্চপদস্থ কর্মচারী । যে বাড়িতে র্তার আপিস সেটা সেকালের একজন বড়োলোকের