পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ઝ૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী কাটাকাটি মারামারি চলত— গেল কী উপায়ে । কেবলমাত্র শিক্ষাবিস্তারের দ্বারা । আমাদের দেশেও সেই উপায়েই যেত। কিন্তু শতাধিক বৎসরের ইংরেজ-শাসনের পরে দেশে শতকরা পাচজনের কপালে শিক্ষা জুটেছে, সে শিক্ষাও শিক্ষার বিড়ম্বনা । অবজ্ঞার কারণকে দূর করবার চেষ্টা না করে লোকের কাছে প্রমাণ করা যে, আমরা অবজার যোগ্য, এইটে হচ্ছে আমাদের অশক্তির সব চেয়ে বড়ো ট্যাক্সো। মানুষের সকল সমস্ত সমাধানের মূলে হচ্ছে তার স্বশিক্ষা। আমাদের দেশে তার রাস্তা বন্ধ, কারণ ‘ল অ্যাও অর্ডার’ আর কোনো উপকারের জন্যে জায়গা রাখলে না, তহবিল একেবারে ফাকা । আমি দেশের কাজের মধ্যে একটি কাজকেই শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নিয়েছিলুম ; জনসাধারণকে আত্মশক্তিতে প্রতিষ্ঠা দেবার শিক্ষা দেব বলে এতকাল ধরে আমার সমস্ত সামর্থ্য দিয়েছি। এজন্যে কর্তৃপক্ষের আমুকুল্যও আমি প্রত্যাখ্যান করতে চাই নি, প্রত্যাশাও করেছি, কিন্তু তুমি জান কতটা ফল পেয়েছি। বুঝতে পেরেছি, হবার নয়। মস্ত আমাদের পাপ, আমরা অশক্ত । তাই যখন শুনলুম, রাশিয়াতে জনসাধারণের শিক্ষা প্রায় শূন্ত অঙ্ক থেকে প্রভূতপরিমাণে বেড়ে গেছে, তখন মনে মনে ঠিক করলুম, ভাঙা শরীর আরো যদি ভাঙে তো ভাণ্ডক, ওখানে যেতেই হবে। এরা জেনেছে অশক্তকে শক্তি দেবার একটিমাত্র উপায় শিক্ষা— অন্ন স্বাস্থ্য শাস্তি সমস্তই এরই পরে নির্ভর করে। ফাকা ‘ল অ্যাগু, অর্ডার’ নিয়ে না ভরে পেট, না ভরে মন । অথচ তার দাম দিতে গিয়ে সর্বস্ব বিকিয়ে গেল। আধুনিক ভারতবর্ষের আবহাওয়ায় আমি মাহুষ, তাই এতকাল আমার মনে দৃঢ় ধারণা ছিল, প্রায় তেত্রিশ কোটি মূর্খকে বিদ্যাদান করা অসম্ভব বললেই হয় ; এজন্য আমাদের মন্দ ভাগ্য ছাড়া আর কাউকে বুঝি দোষ দেওয়া চলে না । যখন শুনেছিলুম, এখানে চাষী ও কর্মীদের মধ্যে শিক্ষা হুহু করে এগিয়ে চলেছে আমি ভেবেছিলুম, সে শিক্ষা বুঝি সামান্ত একটুখানি পড়া ও লেখা ও অঙ্ক কষা— কেবলমাত্র মাথা-গুনতিতেই তার গৌরব । সেও কম কথা নয়। আমাদের দেশে তাই হলেই রাজাকে আশীর্বাদ করে বাড়ি চলে যে তুম। কিন্তু এখানে দেখলুম, বেশ পাকা রকমের শিক্ষা, মানুষ করে তোলবার উপযুক্ত, নোট মুখস্থ করে এম. এ. পাস করবার মতন নয়। | কিন্তু এসব কথা আর-একটু বিস্তারিত করে পরে লিখব, আজ আর সময় নেই। আজই সন্ধ্যাবেলায় বর্লিন অভিমুখে যাত্রা করব। তার পরে ৩রা অক্টোবর আটলাণ্টিক পাড়ি দেব— কত দিনের মেয়াদ আজও নিশ্চিত করে বলতে পারছি নে । কিন্তু, শরীর মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। তবু এবারকার স্বযোগ ছাড়তে সাহল হয় না— যদি কিছু কুড়িয়ে আনতে পারি তা হলেই বাকি যে-ক’টা দিন বাচি বিশ্রাম করতে