পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OX o - রবীন্দ্র-রচনাবলী বোঝা থেকে দেশকে মুক্ত করবার পথে চলেছে। ‘ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়’। কেননা ঘরে আলো আসতে দেওয়া হয় নি; যে আলোতে আজকের পৃথিবী জেগে সেই শিক্ষার অালো ভারতের রুদ্ধ দ্বারের বাইরে। রাশিয়ায় যখন যাত্রা করলুম খুব বেশি আশা করি নি। কেননা, কতটা সাধ্য এবং অসাধ্য তার আদর্শ ব্রিটিশ ভারতবর্ষ থেকেই আমি পেয়েছি। ভারতের উন্নতিসাধনের দুরূহত যে কত বেশি সে কথা স্বয়ং খৃস্টান পাত্রি টমসন অতি করুণস্বরে সমস্ত পৃথিবীর কাছে জানিয়েছেন। আমাকেও মানতে হয়েছে দুরূহতা আছে বই-কি, নইলে আমাদের এমন দশা হবেই বা কেন। একটা কথা আমার জানা ছিল, রাশিয়ায় প্রজাসাধারণের উন্নতিবিধান ভারতবর্ষের চেয়ে বেশি দুরূহ বই কম নয়। প্রথমত এখানকার সমাজে যারা ভদ্রেতর শ্রেণীতে ছিল আমাদের দেশের সেই শ্রেণীর লোকের মতোই তাদের অন্তর-বাহিরের অবস্থা। সেইরকমই নিরক্ষর নিরুপায়, পূজাৰ্চন পুরুতপাগু দিনক্ষণ তাগাতাবিজে বুদ্ধিমুদ্ধি সমস্ত চাপা-পড়া, উপরওআলাদের পায়ের ধুলোতেই মলিন তাদের আত্মসম্মান, আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের স্বযোগ-সুবিধা তারা কিছুই পায় নি, প্রপিতামহদের ভূতে-পাওয়া তাদের ভাগ্য, সেই ভূত তাদের বেঁধে রেখেছে হাজার বছরের আগেকার অচল খোটায়— মাঝে মাঝে য়িহুদী প্রতিবেশীদের পরে খুন চেপে যায়, তখন পাশবিক নিষ্ঠুরতার আর অস্ত থাকে না। উপরওআলাদের কাছ থেকে চাবুক খেতে যেমন মজবুত, নিজেদের সমশ্রেণীর প্রতি অন্যায় অত্যাচার করতে তারা তেমনি প্রস্তুত । । এই তো হল ওদের দশা— বর্তমানে যাদের হাতে ওদের ভাগ্য ইংরেজের মতো তারা ঐশ্বর্যশালী নয়, কেবলমাত্র ১৯১৭ খৃস্টাব্দের পর থেকে নিজের দেশে তাদের অধিকার আরম্ভ হয়েছে ; রাষ্ট্রব্যবস্থা আটে-ঘাটে পাকা হবার মতো সময় এবং সম্বল তারা পায় নি ; ঘরে-বাইরে প্রতিকূলতা ; তাদের মধ্যে আত্মবিদ্রোহ সমর্থন করবার জন্তে ইংরেজ এমন-কি আমেরিকানরাও গোপনে ও প্রকাতে চেষ্টা করছে। জনসাধারণকে সক্ষম ও শিক্ষিত করে তোলবার জন্যে তারা যে পণ করেছে তার ডিফিকালটি ভারতকর্তৃপক্ষের ডিফিকালটির চেয়ে বহুগুণে বড়ো। অতএব রাশিয়ায় গিয়ে বেশি কিছু দেখতে পাব এরকম আশা করা অন্যায় হত। কাই বা জানি, কীই বা দেখেছি যাতে আমাদের আশার জোর বেশি হতে পারে। আমাদের দুঃখী দেশে লালিত অতিভুর্বল আশা নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলুম। গিয়ে যা দেখলুম তাতে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি। ‘ল অ্যাও অর্ডার কী পরিমাণে রক্ষিত হচ্ছে বা না হচ্ছে তার তদন্ত করবার যথেষ্ট সময় পাই নি— শোনা যায়, যথেষ্ট জবরদস্তি