পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি |లిల్ఫి উপসংহার সোভিয়েট শাসনের প্রথম পরিচয় আমার মনকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে, সে কথা পূর্বেই বলেছি। তার কয়েকটি বিশেষ কারণ আছে, সেটা আলোচনার যোগ্য । সেখানকার যে ছবিটি আমার মনের মধ্যে মূর্তি নিয়েছে তার পিছনে তুলছে ভারতবর্ষের দুর্গতির কালে রঙের পটভূমিকা। এই দুৰ্গতির মূলে যে ইতিহাস আছে তার থেকে একটি তত্ত্ব পাওয়া যায়, সেই তত্ত্বটিকে চিন্তা করে দেখলে আলোচ্য প্রসঙ্গে আমার মনের ভাব বোঝা সহজ হবে । ভারতবর্ষে মুসলমান-শাসন-বিস্তারের ভিতরকার মানসটি ছিল রাজমহিমালাভ। সেকালে সর্বদাই রাজ্য নিয়ে যে হাত-চালাচালি হত তার গোড়ায় ছিল এই ইচ্ছা । গ্রীসের সেকেন্দর শাহ ধূমকেতুর অনলোজ্বল পুচ্ছের মতো তার রণবাহিনী নিয়ে বিদেশের আকাশ বেঁটিয়ে বেড়িয়েছিলেন সে কেবল র্তার প্রতাপ প্রসারিত করবার জন্যে। রোমকদেরও ছিল সেই প্রবৃত্তি। ফিনীশীয়েরা নানা সমুদ্রের তীরে তীরে বাণিজ্য করে ফিরেছে কিন্তু তারা রাজ্য নিয়ে কড়াকড়ি করে নি। একদা যুরোপ হতে বণিকের পণ্যতরী যখন পূর্ব-মহাদেশের ঘাটে ঘাটে পাড়ি জমালে তখন থেকে পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসে এক নূতন পর্ব ক্রমশ অভিব্যক্ত হয়ে উঠল ; ক্ষত্রিযুগ গেল চলে, বৈহুযুগ দেখা দিল। এই যুগে বণিকের দল বিদেশে এসে তাদের পণ্যহাটের খিড়কিমহলে রাজ্য জুড়ে দিতে লাগল। প্রধানত তারা মুনফার অঙ্ক বাড়াতে চেয়েছিল ; বীরের সম্মান তাদের লক্ষ্য ছিল না । এই কাজে তারা নানা কুটিল পন্থা অবলম্বন করতে কুষ্ঠিত হয় নি ; কারণ তারা চেয়েছিল সিদ্ধি কীর্তি নয়। এই সময় ভারতবর্ষ তার বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য জগতে বিখ্যাত ছিল— তখনকার বিদেশী ঐতিহাসিকেরা সে কথা বারম্বার ঘোষণা করে গেছেন। এমন-কি স্বয়ং ক্লাইভ বলে গেছেন যে, “ভারতবর্ষের ধনশালিতার কথা যখন চিস্তা করে দেখি তখন অপহরণনৈপুণ্যে নিজের সংযমে আমি নিজেই বিস্মিত হই।” এই প্রভূত ধন, এ কখনো সহজে হয় না— ভারতবর্ষ এ ধন উৎপন্ন করেছিল। তখন বিদেশ থেকে যারা এসে এখানকার রাজাসনে বসেছে তারা এ ধন ভোগ করেছে, কিন্তু নষ্ট করে নি। অর্থাং তারা ভোগী ছিল, কিন্তু বণিক ছিল না।