পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Oరిశి রবীন্দ্র-রচনাবলী তার পর বাণিজ্যের পথ সুগম করার উপলক্ষে বিদেশী বণিকেরা তাদের কারবারের গদিটার উপরে রাজতত্ত চড়িয়ে বসল। সময় ছিল অনুকূল। তখন মোগলরাজত্বে ভাঙন ধরেছে, মারাঠির শিখেরা এই সাম্রাজ্যের গ্রন্থিগুলো শিথিল করতে প্রবৃত্ত, ইংরেজের হাতে সেটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ধ্বংসের পথে । পূর্বতন রাজগৌরবলোলুপের যখন এ দেশে রাজত্ব করত তখন এ দেশে অত্যাচারঅবিচার-অব্যবস্থা ছিল না এ কথা বলা চলে না। কিন্তু তারা ছিল এ দেশের অঙ্গীভূত। তাদের আঁচড়ে দেশের গায়ে যা ক্ষত হয়েছিল তা ত্বকের উপরে ; রক্তপাত অনেক হয়েছে, কিন্তু অস্থিবন্ধনীগুলোকে নড়িয়ে দেয় নি। ধন-উৎপাদনের বিচিত্র কাজ তখন অব্যাহত চলছিল, এমন-কি নবাব-বাদশাহের কাছ থেকে সে-সমস্ত কাজ প্রশ্রয় পেয়েছে। তা যদি না হত তা হলে এখানে বিদেশী বণিকের ভিড় ঘটবার কোনো কারণ থাকত না— মরুভূমিতে পঙ্গপালের ভিড় জমবে কেন। তার পরে ভারতবর্ষে বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের অশুভ সংগমকালে বণিক রাজা দেশের ধনকল্পতরুর শিকড়গুলোকে কী করে ছেদন করতে লাগলেন, সে ইতিহাস শতবারকথিত এবং অত্যন্ত শ্রতিকটু। কিন্তু পুরাতন বলে সেটাকে বিস্কৃতির মুখুলি চাপ দিয়ে রাখবার চেষ্টা চলবে না। এ দেশের বর্তমান দুৰ্বহ দারিদ্র্যের উপক্রমণিক সেইখানে। ভারতবর্ষের ধনমহিমা ছিল, কিন্তু সেটা কোন বাহন-যোগে দ্বীপান্তরিত হয়েছে সে কথা যদি ভুলি তবে পৃথিবীর আধুনিক ইতিহাসের একটা তত্ত্বকথা আমাদের এড়িয়ে যাবে। আধুনিক রাষ্ট্রনীতির প্রেরণাশক্তি বীর্যাভিমান নয়, সে হচ্ছে ধনের লোভ, এই তত্ত্বটি মনে রাখা চাই । রাজগৌরবের সঙ্গে প্রজাদের একটা মানবিক সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু ধনলোভের সঙ্গে তা থাকতেই পারে না । ধন নির্মম, নৈর্ব্যক্তিক । যে মুরগি সোনার ডিম পাড়ে লোভ যে কেবল তার ডিমগুলোকেই ঝুড়িতে তোলে তা নয়, মুরগিটাকে স্বদ্ধ সে জবাই করে। বণিকরাজের লোভ ভারতের ধন-উৎপাদনের বিচিত্র শক্তিকেই পঙ্গু করে দিয়েছে। বাকি রয়েছে কেবল কৃষি, নইলে কঁাচা মালের জোগান বন্ধ হয় এবং বিদেশী পণ্যের হাটে মূল্য দেবার শক্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ভারতবর্ষের সদ্যপাতী জীবিকা এই অতিক্ষীণ বৃন্তের উপর নির্ভর করে আছে। এ কথা মেনে নেওয়া যাক, তখনকার কালে যে নৈপুণ্য ও যে-সকল উপায়ের যোগে হাতের কাজ চলত ও শিল্পীরা খেয়ে-প’রে বঁাচত, যন্ত্রের প্রতিযোগিতায় তার স্বতই নিক্রিয় হয়ে পড়েছে। অতএব প্রজাদের বাচাবার জন্যে নিতান্তই প্রয়োজন ছিল সর্বপ্রষত্ত্বে তাদের যন্ত্রকুশল করে তোলা। প্রাণের দায়ে বর্তমান কালে সকল দেশেই এই উদ্যোগ