পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిలు রবীন্দ্র-রচনাবলী দিলে, যন্ত্রের নিয়মই বিশ্বের নিয়ম, বাহ সিদ্ধিলাভের বাহিরে কোনো নিত্য সত্য নেই । প্রতিযোগিতার উগ্রতা সর্বব্যাপী হয়ে উঠল, দস্থ্যবৃত্তি ভদ্রবেশে পেল সন্মান। লোভের প্রকাশ্ব ও চোরা রাস্তা দিয়ে কারখানাঘরে, খনিতে বড়ো বড়ো আবাদে, ছদ্মনামধারী দাসবৃত্তি মিথ্যাচার ও নির্দয়ত কিরকম হিংস্র হয়ে উঠেছে সে সম্বন্ধে যুরোপীয় সাহিত্যে রোমহর্ষক বর্ণনা বিস্তর পাওয়া যায়। পাশ্চাত্য ভূখণ্ডে যারা টাকা করে আর যারা টাকা যোগায় অনেক দিন ধরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে গেছে। মানুষের সব চেয়ে বড়ে ধর্ম সমাজধর্ম, লোভরিপু সব চেয়ে তার বড়ো হস্তারক। এই যুগে সেই রিপু মানুষের সমাজকে আলোড়িত করে তার সম্বন্ধবন্ধনকে শিথিল ও বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এক দেশে এক জাতির মধ্যেই এই নির্মম ধনার্জন ব্যাপারে যে বিভাগ স্বাক্ট করতে উদ্যত তাতে যত দুঃখই থাক তবু সেখানে স্থযোগের ক্ষেত্র খোলা থাকে, শক্তির বৈষম্য থাকতে পারে কিন্তু অধিকারের বাধা থাকে না । ধনের জণতাকলে সেখানে আজ যে আছে পেন্যবিভাগে কাল সেই উঠতে পারে পেষণবিভাগে। শুধু তাই নয়, ধনীরা যে ধন সঞ্চয় করে, নানা আকারে সমস্ত দেশের মধ্যে তার কিছু-না-কিছু ভাগ-বাটোয়ার আপনিই হয়ে যায়। ব্যক্তিগত সম্পদ জাতীয় সম্পদের দায়িত্বভার অনেক পরিমাণে না নিয়ে থাকতে পারে না । লোকশিক্ষা, লোকস্বাস্থ্য, লোকরঞ্জন, সাধারণের জন্যে নানাপ্রকার হিতানুষ্ঠান— এ-সমস্তই প্রভূত ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। দেশের এই-সমস্ত বিচিত্র দাবি ইচ্ছায় অনিচ্ছায় লক্ষ্যত অলক্ষ্যত ধনীরা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু ভারতের যে ধনে বিদেশী বণিক বা রাজপুরুষেরা ধনী তার নূ্যনতম উচ্ছিঃমাত্রই ভারতের ভাগে পড়ে। পাটের চাষী শিক্ষার জন্যে, স্বাস্থ্যের জন্যে সুগভীর অভাবগুলো অনাবৃষ্টির নালাডোবার মতো ই করে রইল, বিদেশগামী মুনফগ থেকে তার দিকে কিছুই ফিরল না । যা গেল তা নিঃশেষে গেল। পাটের মুনফ সম্ভবপর করবার জন্যে গ্রামের জলাশয়গুলি দূষিত হল—এই অসহ জলকষ্ট নিবারণের উদ্দেশে বিদেশী মহাজনদের ভরা থলি থেকে এক পয়সা খসল না। যদি জলের ব্যবস্থা করতে হয় তবে তার সমস্ত ট্যাক্সের টান এই নিঃস্ব নিরম্নদের রক্তের উপরই পড়ে। সাধারণকে শিক্ষা দেবার জন্তে রাজকোষে টাকা নেই– কেন নেই। তার প্রধান কারণ, প্রভূত পরিমাণ টাকা ভারতবর্ষকে সম্পূর্ণই ত্যাগ করে চলে যায় — এ হল লোভের টাকা, ষাতে করে আপন টাকা ষোলো-আনাই পর হয়ে যায়। অর্থাৎ জল উবে ষায় এ পারের জলাশয়ে আর মেঘ হয়ে তার বর্ষণ হতে থাকে ও পারের দেশে । সে দেশের হাসপাতালে বিদ্যালয়ে এই হতভাগ্য অশিক্ষিত অমুস্থ মুমূৰু ভারতবর্ষ স্বদীর্ঘকাল অপ্রত্যক্ষভাবে রসদ জুগিয়ে আসছে।