পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭88 রবীন্দ্র-রচনাবলী রকমে মেলানো হয় তাতে সত্যের প্রমাণ হয় না ; বস্তুত যে পরিমাণেই জোর সেই পরিমাণেই সত্যের অপ্রমাণ । যুরোপে যখন খৃস্টান শাস্ত্রবাক্যে জবরদস্ত বিশ্বাস ছিল তখন মানুষের হাড়গোড় ভেঙে, তাকে পুড়িয়ে বিধিয়ে, তাকে চিলিয়ে, ধর্মের সত্য-প্রমাণের চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। আজ বলশেভিক মতবাদ সম্বন্ধে তার বন্ধু ও শত্রু উভয় পক্ষেরই সেইরকম উদাম গায়ের-জোর যুক্তিপ্রয়োগ । দুই পক্ষেরই পরস্পরের নামে নালিশ এই যে, মানুষের মতস্বাতন্ত্র্যের অধিকারকে পীড়িত করা হচ্ছে। মাঝের থেকে পশ্চিম মহাদেশে আজ মানবপ্রকৃতি দুই তরফ থেকেই ঢেলা খেয়ে মরছে। আমার মনে পড়ছে আমাদের বাউলের গান— নিষ্ঠুর গরজী, তুই কি মানসমুকুল ভাজবি আগুনে ? তুই ফুল ফুটাবি বাস ছুটবি সবুর বিহনে। দেখ-না আমার পরম গুরু সাই সে যুগযুগাস্তে ফুটায় মুকুল, তাড়াহুড়া নাই। তোর লোভ প্রচণ্ড, তাই ভরসা দণ্ড— এর আছে কোন উপায় । কয় সে মদন দিল নে বেদন, শোন নিবেদন, সেই শ্ৰীগুরুর মনে । সহজধারা আপনহারা তার বাণী শোনে রে গরজী ॥ সোভিয়েট রাশিয়ার লোকশিক্ষা সম্বন্ধে আমার যা বক্তব্য সে আমি বলেছি, তা ছাড়া সেখানকার পলিটিক্স মুনফ-লোলুপদের লোভের দ্বারা কলুষিত নয় বলে রাশিয়া রাষ্ট্রের অন্তর্গত নানাবিধ প্রজা জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে সমান অধিকারের দ্বারা ও প্রকৃষ্ট শিক্ষার স্বযোগে সম্মানিত হয়েছে, এ কথাটারও আলোচনা করেছি। আমি ব্রিটিশভারতের প্রজা বলেই এই দুটি ব্যাপার আমাকে এত গভীরভাবে আনন্দ দিয়েছে। এখন বোধ করি একটি শেষ প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে । বলশেভিক অর্থনীতি সম্বন্ধে আমার মত কী, এ কথা অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন। আমার ভয় এই যে, আমরা চিরদিন শাস্ত্রশাসিত পাণ্ডাচালিত দেশ, বিদেশের আমদানি বচনকে একেবারেই বেদবাক্য বলে মেনে নেবার দিকেই আমাদের মুগ্ধ মনের ঝোক । গুরুমন্ত্রের মোছ থেকে সামলিয়ে নিয়ে আমাদের বলা দরকার যে, প্রয়োগের দ্বারাই