পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মামুষের ধর্ম Cゲぬ তার বেশি আর কোনো অর্থ এতে নেই। অহংকারের প্রকাশকে আত্মগৌরবের প্রকাশ বলে মনে করা বর্বরতা, তেমনি নিরর্থক বাহানুষ্ঠানকে মনে করা পুণ্যামুষ্ঠান। এ যেমন দৈহিক দিকে তেমনি আর্থিক দিকেও মানুষের স্পর্ধার অস্ত নেই। এখানেও রেকর্ড, ব্রেক্‌ করা, পূর্ব-ইতিহাসের বেড়া-ডিঙোনো লক্ষ। এখানকার চেষ্টা । ঠিক অস্বাভাবিকের জন্যে নয়, অসাধারণের জন্তে। এতে আছে সীমার প্রতি অসহিষ্ণুতা, তার বাইরে আর কিছুই নয়। কিন্তু, যা-কিছু বস্তুগত যা বাহিক, সীমাই তার ধর্ম। সেই সীমাকে বাড়িয়ে চলা যায়, পেরিয়ে যাওয়া যায় না। যিশুখৃস্ট বলেছেন, সূচীর রন্ধ দিয়ে উট যেমন গলে না ধনীর পক্ষে স্বৰ্গদ্বার তেমনি দুর্গম। কেননা ধনী নিজের সত্যকে এমন-কিছুর দ্বারা অনুভব ও প্রকাশ করতে অভ্যস্ত যা অপরিমেয়ের বিপরীত, তাই সে হয়তেহর্থাৎ, মহন্তত্বের অর্থ হতে হীন হয়। হাতির মতো বড়ো হওয়াকে মানুষ বড়োলোক হওয়া বলে না, হয়তো বর্বর মানুষ তাও বলে । বাহিরের উপকরণ পুঞ্জিত করার গর্ব করা সম্বন্ধেও সেই কথা খাটে। অন্যের চেয়ে আমার বস্তুসঞ্চয় বেশি, এ কথা মানুষের পক্ষে বলবার কথা নয়। তাই মৈত্রেরী বলেছিলেন, যেনাহং নামৃত স্তাম্ কিমহং তেন কুর্ষামূ। তিনি উপেক্ষ করেছিলেন উপকরণবতাং জীবিতম্। যে ওস্তাদ তানের অজস্রত গণনা করে গানের শ্রেষ্ঠত বিচার করে তার বিদ্যাকে সেই উটের সঙ্গে তুলনা করব । শ্রেষ্ঠ গান এমন পর্যাপ্তিতে এসে স্তন্ধ হয় যার উপরে আর একটিমাত্র সুরও যোগ করা যায় না । বস্তুত গানের সেই থামাকে সীমা বলা যায় না । সে এমন একটি শেষ যার শেষ নেই। অতএব যথার্থ গায়কের আত্মা আপন সার্থকতাকে প্রকাশ করে তানের প্রভূত সংখ্যার দ্বারা নয়, সমগ্র গানের সেই চরম রূপের দ্বারা, যা অপরিমেয়, অনির্বচনীয়, বাইরের দৃষ্টিতে যা স্বল্প, অস্তরে যা অসীম। তাই মানুষের যে সংসার তার অহং-এর ক্ষেত্র সে দিকে তার অহংকার ভূরিতায়, যে দিকে তার আত্মা সে দিকে তার সার্থকতা ভূমায়। এক দিকে তার গর্ব স্বার্থসিদ্ধিতে, আর-এক দিকে তার গৌরব পরিপূর্ণতায়। সৌন্দর্য কল্যাণ বীর্ষ ত্যাগ প্রকাশ করে মানুষের আত্মাকে, অতিক্রম করে প্রাকৃত মানুষকে, উপলব্ধি করে জীবমানবের অন্তরতম বিশ্বমানবকে । যং লব্ধ, চাপরং লাভং মন্ততে নাধিকং ততঃ। সৃষ্ট্রি দিকে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্ত-সকল প্রাণী, বাইরে থেকে জীবিকার অর্থ খুজে খুজে মানুষ আপন অন্তরের মধ্যে আশ্চর্য হয়ে কাকে অনুভব করলে। যিনি নিহিতার্থে দধীতি, যিনি তাকে তার অন্তর্নিহিত অর্থ দিচ্ছেন। সেই অর্থ মানুষের আপন আত্মারই গভীর অর্থ। সেই অর্থ এই যে মানুষ মহৎ । মানুষকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে মহৎ ; তবেই প্রমাণ হবে যে, সে মানুষ। প্রাণের মূল্য দিয়েও তার আপন ভূমাকে প্রকাশ