পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মামুষের ধর্ম \రిన్స్ల(t তাই মানবদেবতার সম্বন্ধে এই কথা শুনি— যদ যদ বিভূতিমং সত্বং শ্ৰীমদ উৰ্জিতমেব বা তত্তদেবাবগচ্ছ ত্বং মম তেজোহংশসম্ভবম্। যা কিছুতে ঐশ্বৰ্ষ আছে, শ্ৰী আছে, শ্রেষ্ঠত আছে, সে আমারই তেজের অংশ থেকে সভূত। বিশ্বে ছোটোবড়ো নানা পদার্থই আছে। থাকা-মাত্রের যে দাম তা সকলের পক্ষেই সমান। নিছক অস্তিত্বের আদর্শে মাটির ঢেলার সঙ্গে পদ্মফুলের উৎকর্ষঅপকর্ষের ভেদ নেই। কিন্তু, মহিষের মনে এমন একটি মূল্যভেদের আদর্শ আছে যাতে প্রয়োজনের বিচার নেই, যাতে আয়তনের বা পরিমাণের তেল চলে না। মামুষের মধ্যে বস্তুর অতীত একটি অহৈতুক পূর্ণতার অনুভূতি আছে, একটা অন্তরতম সার্থকতার বোধ । তাকেই সে বলে শ্রেষ্ঠতা | অথচ, এই শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে মতের ঐক্য তে৷ দেখি নে। তা হলে সেটা যে নৈর্ব্যক্তিক শাশ্বত সত্যে প্রতিষ্ঠিত, এ কথা বলা যায় কী করে । জ্যোতির্বিদ দূরবীন নিয়ে জ্যোতিষ্কের পর্যালোচনা করতে চান, কিন্তু তার বাধা বিস্তর। আকাশে আছে পৃথিবীর ধুলো, বাতাসের আবরণ, বাষ্পের অবগুণ্ঠন চার দিকে নানাপ্রকার চঞ্চলতা । যন্ত্রের ক্রটিও অসম্ভব নয়, যে মন দেখছে তার মধ্যে আছে পূর্বসংস্কারের আবিলতা। ভিতর-বাহিরের সমস্ত ব্যাঘাত নিরস্ত করলে বিশুদ্ধ সত্য পাওয়া যায়। সেই বিশুদ্ধ সত্য এক, কিন্তু বাধাগ্রস্ত প্রতীতির বিশেষত্বঅনুসারে ভ্রান্ত মত বহু । পুরোনো সভ্যতার মাটিচাপা ভাঙাচোরা চিহ্নশেষ উদ্ধার করলে তার মধ্যে দেখা যায় আপন শ্রেষ্ঠতাকে প্রকাশ করবার জন্তে মানুষের প্রভূত প্রয়াস। নিজের মধ্যে যে কল্পনাকে সকল কালের সকল মানুষের বলে সে অনুভব করেছে তারই দ্বার সর্বকালের কাছে নিজের পরিচয় দিতে তার কত বল কত কৌশল। ছবিতে, মূর্তিতে, ঘরে, ব্যবহারের সামগ্রীতে, সে ব্যক্তিগত মামুষের খেয়ালকে প্রচার করতে চায় নি— বিশ্বগত মামুষের আনন্দকে স্থায়ী রূপ দেবার জন্যে তার দুঃসাধ্য সাধনা। মাতুষ তাকেই জানে শ্রেষ্ঠতা যাকে সকল কাল ও সকল মানুষ স্বীকার করতে পারে। সেই শ্রেষ্ঠতার দ্বারা মানুষ আত্মপরিচয় দিয়ে থাকে। অর্থাৎ, আপন আত্মায় সকল মানুষের আত্মার পরিচয় দেয়। এই পরিচয়ের সম্পূর্ণতাতেই মানুষের অভু্যদয়, তার বিকৃতিতেই মানুষের পতন। বাহসম্পদের প্রাচুর্যের মাঝখানেই সেই বিনষ্টির লক্ষণ সহসা এসে দেখা দেয় যখন মদান্ধ স্বাথান্ধ মানুষ চিরমানবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। পাশ্চাত্য