পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের ধর্ম 8o & খুজতে বেরিয়েছে গহনে প্রবেশের গোপন পথ। এমনি করে তার ইতিবৃত্তে এক যুগের পর আর-এক যুগ আসছে— মানুষ অশ্রাস্ত যাত্রা করেছে অন্নবস্ত্রের জন্যে নয়, আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে মানবলোকে মহামানবের প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে, আপনার জটিল বাধার থেকে আপনার অন্তরতম সত্যকে উদ্ধার করবার জন্যে ; সেই সত্য যা তার পুঞ্জিত দ্রব্যভারের চেয়ে বড়ো, তার সমস্ত কৃতকর্মের চেয়ে বড়ো, তার সমস্ত প্রথা মত বিশ্বাসের চেয়ে বড়ো, যার মৃত্যু নেই, যার ক্ষয় নেই। প্রভূত হয়েছে মাহুষের ভূলভ্রাস্তি নিফলতা, পথে পথে তারা প্রকাও ভগ্নস্তৃপরূপে ছড়িয়ে আছে ; মানুষের দুঃখব্যথার আঘাত হয়েছে অপরিসীম, তার অবরুদ্ধ সার্থকতার শৃঙ্খল ছেদনে কঠিন অধ্যবসায় ; এ-সমস্ত এক মুহূর্তও কে সহ করতে পারত, মানুষের অন্তরবাসী ভূমার মধ্যে যদি এর চিরন্তন কোনো অর্থ না থাকত। মানুষের সকল দুঃখের উপরকার কথা এই যে— মানুষ আপন চৈতন্যকে প্রসারিত করছে আপন অসীমের দিকে, জ্ঞানে প্রেমে কর্মে বৃহত্তর ঐক্যকে আয়ত্ত করতে চলেছে আপনার সকল মহং কীর্তিতে, তার নিকটতর সামীপ পাবার জন্যে ব্যগ্র বাহু বাড়িয়েছে যাকে তে সর্বগং সর্বত: প্রাপ্য ধীরা যুক্তাত্মান: সর্বমেবাবিশস্তি। মানুষ হয়ে জন্মলাভ করে আরাম চাইবে কে, বিশ্রাম পাব কোথায় । মুক্তি পেতে হবে, মুক্তি দিতে হবে, এই-যে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য— মহাবিশ্বজীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে নিৰ্ভয়ে ছুটিতে হবে, সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা । মৃত্যুরে না করি শঙ্কা । দুর্দিনের অশ্রজলধারা মস্তকে পড়িবে ঝরি— তারি মাঝে যাব অভিসারে তারি কাছে, জীবনসর্বস্বধন আপিয়াছি যারে জন্ম জন্ম ধরি । কে সে । জানি না কে। চিনি নাই তারে । শুধু এইটুকু জানি, তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে, ঝড়ঝঞ্চা-বজ্রপাতে, জালায়ে ধরিয়া সাবধানে অন্তর-প্রদীপখানি। শুধু জানি, যে শুনেছে কানে তাহার আহবানগীত, ছুটেছে সে নিভীক পরানে সংকট-আবর্ত-মাঝে, দিয়েছে সে সর্ব বিসর্জন, নিৰ্বাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি ; মৃত্যুর গর্জন