পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8:ኳ” রবীন্দ্র-রচনাবলী অক্সফোর্ডে যা বলেছি তা চিন্তা করে বলা। অস্থভূতি থেকে উদ্ধার করে অন্ত তত্বের সঙ্গে মিলিয়ে যুক্তির উপর খাড়া করে সেটা বলা । কিন্তু, তার আরম্ভ ছিল এখানে। তখন স্পষ্ট দেখেছি, জগতের তুচ্ছতার আবরণ খসে গিয়ে সত্য অপরূপ সৌন্দর্ষে দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে তর্কের কিছু নেই, সেই দেখাকে তখন সত্যরূপে জেনেছি। এখনো বাসনা আছে, হয়তো সমস্ত বিশ্বের আনন্দরূপকে কোনো-এক শুভমুহূর্তে আবার তেমনি পরিপূর্ণভাবে কখনো দেখতে পাব। এইটে যে একদিন বাল্যাবস্থার স্বম্পষ্ট দেখেছিলুম, সেইজন্যেই ‘আনন্দরূপমমৃতং যদবিভাতি উপনিষদের এই বাণী আমার মুখে বারবার ধ্বনিত হয়েছে। সেদিন দেখেছিলুম, বিশ্ব স্কুল নয়, বিশ্বে এমন কোনো বস্তু নেই যার মধ্যে রসম্পর্শ নেই । যা প্রত্যক্ষ দেখেছি তা নিয়ে তর্ক কেন । স্থূল আবরণের মৃত্যু আছে, অন্তরতম আনন্দময় যে সভা তার মৃত্যু নেই। C) বর্ষার সময় খালটা থাকত জলে পূর্ণ। শুকনোর দিনে লোক চলত তার উপর দিয়ে। এ পারে ছিল একটা হাট, সেখানে বিচিত্র জনতা । দোতলার ঘর থেকে লোকালয়ের লীলা দেখতে ভালো লাগত। পদ্মায় আমার জীবনযাত্রা ছিল জনত থেকে দূরে। নদীর চর, ধূ-ধূ বালি, স্থানে স্থানে জলকুণ্ড ঘিরে জলচর পাখি। সেখানে যে-সব ছোটাে গল্প লিখেছি তার মধ্যে আছে পদ্মাতীরের আভাস। সাজাদপুরে যখন আসতুম চোখে পড়ত গ্রাম্যজীবনের চিত্র, পল্লীর বিচিত্র কর্মোন্তম । তারই প্রকাশ "পোস্ট মাস্টার’ ‘সমাপ্তি’ ছুটি প্রভৃতি গল্পে। তাতে লোকালয়ের খণ্ড খণ্ড চলতি দৃশুগুলি কল্পনার দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। সেই সময়কার একদিনের কথা মনে আছে। ছোটো শুকনো পুরানো খালে জল এসেছে। পাকের মধ্যে ডিঙিগুলো ছিল অর্ধেক ডোবানো, জল আসতে তাদের ভাসিয়ে তোলা হল । ছেলেগুলো নতুন জলধারার ডাক শুনে মেতে উঠেছে। তারা দিনের মধ্যে দশবার করে বঁাপিয়ে পড়ছে জলে। দোতলার জানলায় দাড়িয়ে সেদিন দেখছিলুম সামনের আকাশে নববর্ধার জলভাৱনত মেঘ, নীচে ছেলেদের মধ্যে দিয়ে প্রাণের তরঙ্গিত কল্লোল। আমার মন লহলা আপন খোলা হুয়ার দিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে, স্বদূরে । অত্যন্ত নিবিড়ভাবে আমার অন্তরে একটা অনুভূতি এল ; সামনে দেখতে পেলুম নিত্যকালব্যাপী একটি সর্বাস্থভূতির অনবচ্ছিন্ন ধারা, নানা প্রাণের বিচিত্ৰ লীলাকে মিলিয়ে নিয়ে একটি অখণ্ড