পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gరితి রবীন্দ্র-রচনাবলী ওগো অন্তরতম, মিটেছে কি তব সকল তিরাষ আসি অস্তরে মম | আমি যে পরিমাণে পূর্ণ অর্থাৎ বিশ্বভূমীন সেই পরিমাণে আপন করেছি তাকে, ঐক্য হয়েছে তার সঙ্গে। সেই কথা মনে করে বলেছিলুম, “তুমি কি খুশি হয়েছ আমার মধ্যে তোমার লীলার প্রকাশ দেখে * বিশ্বদেবতা আছেন, তার আসন লোকে লোকে, গ্রহচন্দ্ৰতারায় । জীবনদেবতা বিশেষভাবে জীবনের আসনে, হৃদয়ে হৃদয়ে তার পীঠস্থান সকল অনুভূতি, সকল অভিজ্ঞতার কেন্দ্রে। বাউল তাকেই বলেছে মনের মানুষ। এই মনের মানুষ, এই সর্বমামুষের জীবনদেবতার কথা বলবার চেষ্টা করেছি ‘Religion of Man' বক্তৃতাগুলিতে। সেগুলিকে দর্শনের কোঠায় ফেললে ভুল হবে । তাকে মতবাদের একটা আকার দিতে হয়েছে, কিন্তু বস্তুত সে কবিচিত্তের একটা অভিজ্ঞতা। এই আন্তরিক অভিজ্ঞতা অনেককাল থেকে ভিতরে ভিতরে আমার মধ্যে প্রবাহিত ; তাকে আমার ব্যক্তিগত চিত্তপ্রকৃতির একটা বিশেষত্ব বললে তাই আমাকে মেনে নিতে হবে। যিনি সর্বজগদগত ভূমা তাকে উপলব্ধি করবার সাধনায় এমন উপদেশ পাওয়া যায় যে, “লোকালয় ত্যাগ করো, গুহাগহবরে যাও, নিজের সত্তাসীমাকে বিলুপ্ত করে অসীমে অস্তৰ্হিত হও।” এই সাধনা সম্বন্ধে কোনো কথা বলবার অধিকার আমার নেই। অন্তত, আমার মন যে সাধনাকে স্বীকার করে তার কথাটা হচ্ছে এই যে, আপনাকে ত্যাগ না করে আপনার মধ্যেই সেই মহান পুরুষকে উপলব্ধি করবার ক্ষেত্র আছে— তিনি নিখিল মানবের আত্মা। তাকে সম্পূর্ণ উত্তীর্ণ হয়ে কোনো অমানব বা অতিমানব সত্যে উপনীত হওয়ার কথা যদি কেউ বলেন তবে সে কথা বোঝবার শক্তি আমার নেই। কেননা, আমার বুদ্ধি মানববুদ্ধি, আমার হৃদয় মানবহৃদয়, আমার কল্পনা মানবকল্পনা। তাকে যতই মার্জনা করি, শোধন করি, তা মানবচিত্ত কখনোই ছাড়াতে পারে না। আমরা যাকে বিজ্ঞান বলি তা মানববুদ্ধিতে প্রমাণিত বিজ্ঞান, আমরা যাকে ব্ৰহ্মানন্দ বলি তাও মানবের চৈতন্তে প্রকাশিত আনন্দ । এই বুদ্ধিতে, এই আনন্দে যাকে উপলব্ধি করি তিনি ভূমা, কিন্তু মানবিক ভূমা । তার বাইরে অন্য কিছু থাকা না-থাক মানুষের পক্ষে সমান। মাময়কে বিলুপ্ত করে যদি মানুষের মুক্তি, তরে মানুষ হলুম কেন। * , , . . .