পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রপুট : 84 জন্মেছিলেম অনাচারের অনাদৃত সংসারে, চিহ্ন-মোছা, প্রাচীরহারা । প্রতিবেশীর পাড়া ছিল ঘন বেড়ায় ঘেরা, আমি ছিলেম বাইরের ছেলে, নাম-না-জানা । ওদের ছিল তৈরি বাসা, ভিড়ের বাসা— ওদের বাধা পথের আসা-যাওয়া দেখেছি দূরের থেকে আমি ব্রাত্য, আমি পংক্তিহারা। বিধান-বাধা মানুষ আমাকে মানুষ মানে নি, তাই আমার বন্ধুহীন খেলা ছিল সকল পথের চৌমাথায়, ওরা তার ও পাশ দিয়ে চলে গেছে বসনপ্রাস্ত তুলে ধরে। ওরা তুলে নিয়ে গেল ওদের দেবতার পূজায় শাস্ত্র মিলিয়ে বাছা-বাছা ফুল— রেখে দিয়ে গেল আমার দেবতার জন্যে সকল দেশের সকল ফুল— এক সূর্যের আলোকে চিরস্বীকৃত। দলের উপেক্ষিত আমি, মানুষের মিলন-ক্ষুধায় ফিরেছি, যে মানুষের অতিথিশালায় প্রাচীর নেই, পাহারা নেই। লোকালয়ের বাইরে পেয়েছি আমার নির্জনের সঙ্গী যারা এসেছে ইতিহাসের মহাযুগে আলো নিয়ে, অস্ত্র নিয়ে, মহাবাণী নিয়ে । তারা বীর, তারা তপস্বী, তারা মৃত্যুঞ্জয়, তারা আমার অন্তরঙ্গ, আমার স্ববর্ণ, আমার স্বগোত্র, তাদের নিত্যশুচিতায় আমি শুচি । তারা সত্যের পথিক, জ্যোতির সাধক, অমৃতের অধিকারী।