পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা । so እግ মেঘদূত মিলনের প্রথম দিনে বঁাশি কী বলেছিল । সে বলেছিল, “সেই মানুষ আমার কাছে এল যে মানুষ আমার দূরের।” আর, বাশি বলেছিল, "ধরলেও বাকে ধরা যায় না তাকে ধরেছি, পেলেও সকল পাওয়াকে যে ছাড়িয়ে যায় তাকে পাওয়া গেল।” তার পরে রোজ বাশি বাজে না কেন । কেননা, আধখানা কথা তুলেছি। শুধু মনে রইল, সে কাছে ; কিন্তু সে যে দূরেও তা খেয়াল রইল না । প্রেমের যে আধখানায় মিলন সেইটেই দেখি, যে আধখানায় বিরহ লে চোখে পড়ে না, তাই দূরের চিরতৃপ্তিহীন দেখাটা আর দেখা যায় না ; কাছের পর্দা আড়াল করেছে। দুই মানুষের মাঝে যে অসীম আকাশ সেখানে সব চুপ, সেখানে কথা চলে না। সেই মস্ত চুপকে বাশির স্বর দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়। অনন্ত আকাশের ফাক না পেলে বঁশি বাজে না । সেই আমাদের মাঝের আকাশটি আঁধিতে ঢেকেছে, প্রতি দিনের কাজে কর্মে কথায় ভরে গিয়েছে, প্রতি দিনের ভয়ভাবনা-কৃপণতায় । २ এক-একদিন জ্যোংস্কারাত্রে হাওয়া দেয় ; বিছানার পরে জেগে বসে বুক ব্যথিয়ে ওঠে ; মনে পড়ে, এই পাশের লোকটিকে তো হারিয়েছি । এই বিরহ মিটবে কেমন করে, আমার অনস্তের সঙ্গে তার অনস্তের বিরহ । দিনের শেষে কাজের থেকে ফিরে এসে যার সঙ্গে কথা বলি সে কে । সে তো সংসারের হাজার লোকের মধ্যে একজন ; তাকে তো জানা হয়েছে, চেনা হয়েছে, সে তো ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু, ওর মধ্যে কোথায় সেই আমার অফুরান একজন, সেই আমার একটিমাত্র। ওকে আবার নূতন করে খুঁজে পাই কোন কুলহারা কামনার ধারে। ওর সঙ্গে আবার একবার কথা বলি সময়ের কোন ফাকে, বনমল্পিকার গদ্ধে নিবিড় কোন কর্মহীন সন্ধ্যার অন্ধকারে।