পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Уе е রবীন্দ্র-রচনাবলী সন্ধ্যা ও প্রভাত এখানে নামল সন্ধ্যা। স্বৰ্ধদেব, কোন দেশে, কোন সমুদ্রপারে, তোমার প্রভাত হল । অন্ধকারে এখানে কেঁপে উঠছে রজনীগন্ধ, বাসরঘরের দ্বারের কাছে অবগুষ্ঠিত নববধূর মতো ; কোনখানে ফুটল ভোরবেলাকার কনকচাপা। জাগল কে। নিবিয়ে দিল সন্ধ্যায়-জালানো দীপ, ফেলে দিল রাত্ৰে-গাথা সেঁউতিফুলের মালা । এখানে একে একে দরজায় আগল পড়ল, সেখানে জানলা গেল খুলে । এখানে নৌকো ঘাটে বাধা, মাৰি ঘুমিয়ে ; সেখানে পালে লেগেছে হাওয়া । ওরা পান্থশালা থেকে বেরিয়ে পড়েছে, পুবের দিকে মুখ করে চলেছে ; ওদের কপালে লেগেছে সকালের আলো, ওদের পারানির কড়ি এখনো ফুরোয় নি ; ওদের জন্তে পথের ধারের জানলায় জানলায় কালো চোখের করুণ কামনা অনিমেষ চেয়ে আছে ; রাস্ত ওদের সামনে নিমন্ত্রণের রাঙা চিঠি খুলে ধরলে, বললে, “তোমাদের জন্তে সব প্রস্তুত।” ওদের হৃৎপিণ্ডের রক্তের তালে তালে জয়ভেরী বেজে উঠল । এখানে সবাই ধূসর আলোয় দিনের শেষ খেয়া পার হল । পান্থশালার আঙিনায় এরা কঁথা বিছিয়েছে ; কেউ বা একলা, কারে বা সঙ্গী ক্লান্ত ; সামনের পথে কী আছে অন্ধকারে দেখা গেল না, পিছনের পথে কী ছিল কানে কানে বলাবলি করছে ; বলতে বলতে কথা বেধে যায়, তার পরে চুপ করে থাকে ; তার পরে আঙিনা থেকে উপরে চেয়ে দেখে, আকাশে উঠেছে সপ্তর্ষি। স্বৰ্ধদেব, তোমার বামে এই সন্ধ্যা, তোমার দক্ষিণে ঐ প্রভাত, এদের তুমি মিলিয়ে দাও। এর ছায়া ওর আলোটিকে একবার কোলে তুলে নিয়ে চুম্বন করুক, এর পুরী ওর বিভাসকে আশীৰ্বাদ করে চলে যাক ।