পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S ०२ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাড়ির এই ভাগটায় রোজ একটু-আধটু মেরামত চলছে। ফাটা সাসির উপর কাগজ আঁটা হল ; বারান্দায় রেলিঙের ফাকগুলোতে বখারি বেঁধে দিলে ; শোবার ঘরে ভাঙা জানলা ইট দিয়ে ঠেকিয়ে রাখলে ; দেয়ালে চুনকাম হল, কিন্তু কালো ছাপগুলোর আভাস ঢাকা পড়ল না । ছাদে আলসের পরে গামলায় একটা রোগা পাতাবাহারের গাছ হঠাৎ দেখা দিয়ে আকাশের কাছে লজ্জ পেলে । তার পাশেই ভিত ভেদ করে অশথ গাছটি সিধে দাড়িয়ে ; তার পাতাগুলো এদের দেখে যেন খিলখিল করে হাসতে লাগল। মস্ত ধনের মস্ত দারিদ্র্য। তাকে ছোটো হাতের ছোটো কৌশলে ঢাকা দিতে গিয়ে তার আবরু গেল । কেবল উত্তর দিকের উজাড় ঘরটির দিকে কেউ তাকায় নি । তার সেই জোড়ভাঙা দরজা আজও কেবল বাতাসে আছড়ে পড়ছে, হতভাগার বুক-চাপড়ানির মতো । গলি আমাদের এই শানবাধানে গলি, বারে বারে ডাইনে বঁায়ে একে বেঁকে একদিন কী যেন খুজতে বেরিয়েছিল । কিন্তু, লে যে দিকেই যায় ঠেকে যায়। এ দিকে বাড়ি, ও দিকে বাড়ি, সামনে বাড়ি । উপরের দিকে যেটুকু নজর চলে তাতে সে একখানি আকাশের রেখা দেখতে পায়— ঠিক তার নিজেরই মতো সরু, তার নিজেরই মতো বাকা । সেই ছাট আকাশটাকে জিজ্ঞাসা করে, "বলো তে দিদি, তুমি কোন নীল শহরের গলি ।” দুপুরবেলায় কেবল একটুধনের জন্তে সে স্বর্ধকে দেখে আর মনে মনে বলে, *কিছুই বোঝা গেল না।” বর্ষামেঘের ছায়া দুইলার বাড়ির মধ্যে ঘন হয়ে ওঠে, কে যেন গলির খাতা থেকে তার আলোটাকে পেন্সিলের আঁচড় দিয়ে কেটে দিয়েছে। বৃষ্টির ধারা শানের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, বর্ষ ডমরু বাজিয়ে যেন সাপ খেলাতে থাকে। পিছল হয়, পথিকদের ছাতায় ছাতায় বেধে যায়, ছাদের উপর থেকে ছাতার উপরে হঠাৎ নালার জল লাফিয়ে পড়ে চমকিয়ে দিতে থাকে।