পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক } • & কৃতঘ্ন শোক ভোরবেলায় সে বিদায় নিলে । আমার মন আমাকে বোঝাতে বসল, “সবই মায়া ।” আমি রাগ করে বললেম, “এই তো টেবিলে সেলাইয়ের বাক্স, ছাতে ফুলগাছের টব, খাটের উপর নাম-লেখা হাতপাখাখানি– সবই তো সত্য ।” মন বললে, ‘তবু ভেবে দেখো—” আমি বললেম, "থামো তুমি । ঐ দেখে-না গল্পের বইখানি, মাঝের পাতায় একটি চুলের কাটা, সবটা পড়া শেষ হয় নি ; এও দি মায়া হয়, সে এর চেয়েও বেশি মায়া হল কেন ।” মন চুপ করলে । বন্ধু এসে বললেন, “ষা ভালো তা সত্য, তা কখনো যায় না ; সমস্ত জগং তাকে রত্বের মতো বুকের হারে গেঁথে রাখে ।” আমি রাগ করে বললেম, "কী করে জানলে । জেছ কি ভালে নয় । সে দেহ গেল কোনখানে ৷” ছোটো ছেলে যেমন রাগ ক’রে মাকে মারে তেমনি করেই বিশ্বে আমার বা-কিছু আশ্রয় সমস্তকেই মারতে লাগলেম । বললেন, "সংসার বিশ্বাসঘাতক ৷” হঠাৎ চমকে উঠলেম । মনে হল কে বললে, “অকৃতজ্ঞ !” জানলার বাইরে দেখি কাউগাছের আড়ালে তৃতীয়ার চাদ উঠছে, যে গেছে যেন তারই হাসির লুকোচুরি। তারা-ছিটিয়ে-দেওয়া অন্ধকারের ভিতর থেকে একটি ভর্ৎসনা এল, “ধরা দিয়েছিলেম সেটাই কি ফাকি, আর আড়াল পড়েছে এইটেকেই এত জোরে বিশ্বাস ?” সতেরো বছর আমি তার সতেরো বছরের জানা । কত আসাযাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি , তারই আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অম্বুমান, কত ইশারা ; তারই সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙা ঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভরসন্ধ্যায় চামেলিফুলের গন্ধ, কখনো বা বসম্ভের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলুৱাৰো সতেরো বছর ধরে এইসব গাখ পড়েছিল তার মনে ।