পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক * ১২১ খবর এল, তারা লুকিয়ে বিবাহ করেছে। তাদের জাতের মিল ছিল না, ছিল কেবল মনের মিল । সকলেই নিন্দে করলে । লক্ষপতি তার ইষ্টদেবতার কাছে লোনার সিংহাসন মানত করে বললেন, “এ ছেলেকে কে বাচায় ।” ছেলেটিকে আদালতে দাড় করিয়ে বিচক্ষণ সব উকিল প্রবীণ সব সাক্ষী দেবতার কৃপায় দিনকে রাত করে তুললে । সে বড়ো আশ্চর্য । সেইদিন ইষ্টদেবতার কাছে জোড়া পাট কাটা পড়ল, ঢাক ঢোল বাজল, সকলেই খুশি হল । বললে, “কলিকাল বটে, কিন্তু ধর্ম এখনো জেগে আছেন।” وبيا তার পরে অনেক কথা । জেল থেকে ছেলেটি ফিরে এল । কিন্তু, দীর্ঘ পথ আর শেষ হয় না। তেপাস্তর মাঠের চেয়েও সে দীর্ঘ এবং সঙ্গীহীন । কতবার অন্ধকারে তাকে শুনতে হল, “হাউমাউথাউ, মামুষের গন্ধ পাউ ।” মাহবকে খাবার জন্তে চারি দিকে এত লোভ । রাস্তার শেষ নেই কিন্তু চলার শেষ আছে। একদিন সেই শমে এসে সে থামল । সেদিন তাকে দেখবার লোক কেউ ছিল না । শিয়রে কেবল একজন দয়াময় দেবতা জেগে ছিলেন । তিনি যম । সেই যমের সোনার কাঠি যেমনি ছোয়ানো আমনি এ কী কাও । শহর গেল মিলিয়ে, স্বপ্ন গেল ভেঙে । মুহূর্তে আবার দেখা দিল সেই রাজপুত্তর । তার কপালে অসীমকালের রাজটিকা । দৈত্যপুরীর দ্বার সে ভাঙবে, রাজকন্যার শিকল সে খুলবে। যুগে যুগে শিশুরা মায়ের কোলে বসে খবর পায়— সেই ঘরছাড়া মানুষ তেপান্তর মাঠ দিয়ে কোথায় চলল। তার সামনের দিকে সাত সমুদ্রের ঢেউ গর্জন করছে। ইতিহাসের মধ্যে তার বিচিত্র চেহারা ; ইতিহাসের পরপারে তার একই রূপ, সে রাজপুত্তর ।