পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক >ペ● আমি বললেম, ‘আমার বড়ো সাধ গিয়েছে, কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকি তোমার বাহিরবাগানের একটি ধারে ।” রাজা বললে, “আচ্ছা বেশ, তার আর ভাবন কী।’ কুঁড়েঘর বানিয়ে দিলে। সে ঘর যেন তুলে-আনা বনফুল । যেমনি তৈরি হল অমনি যেন মুষড়ে গেল। বাস করতে গেলেম, কেবল লজা পেলেম । তার পরে একদিন স্নানযাত্রা । নদীতে নাইতে গেছি। সঙ্গে একশে। সাত জন সঙ্গিনী । জলের মধ্যে পান্ধি নামিয়ে দিলে, স্নান হল । পথে ফিরে আসছি, পন্ধির দরজা একটু ফাক করে দেখি, ও কোন ঘরের বউ গা। যেন নির্মাল্যের ফুল । হাতে সাদা শাখ, পরনে লালপেড়ে শাড়ি । স্বানের পর ঘড়ায় ক’রে জল তুলে আনছে, সকালের আলো তার ভিজে চুলে আর ভিজে ঘড়ার উপর ঝিকিয়ে উঠছে । ছত্রধারিণীকে শুধোলেম, মেয়েটি কে, কোন দেবমন্দিরে তপস্ত করে।’ ছত্রধারিণী হেসে বললে, “চিনতে পারলে না ? ঐ তো দুয়োরানী । তার পরে ঘরে ফিরে একলা বলে আছি, মুখে কথা নেই। রাজা এসে বললে, ‘তোমার কী হয়েছে, কী চাই ।' . আমি বললেম, আমার বড়ে সাধ, রোজ সকালে নদীতে নেয়ে মাটির ঘড়ায় জল তুলে আনব বকুলতলার রাস্তা দিয়ে । রাজা বললে, "আচ্ছ। বেশ, তার আর ভাবনা কী।' রাস্তায় রাস্তায় পাহারা বলল, লোকজন গেল সরে । সাদা শাখ পরলেম আর লালপেড়ে শাড়ি । নদীতে স্নান সেরে ঘড়ায় করে জল তুলে আনলেম । দুয়োরের কাছে এলে মনের দুঃখে ঘড়া আছড়ে ভাঙলেম । যা ভেবেছিলেম তা হল না, শুধু লজ্জা পেলেম । তার পরে সেদিন রাসধাত্রা । মধুবনে জ্যোংস্কারাতে র্ত্যৰু পড়ল। সমস্ত রাত নাচ হল, গান হল । পরদিন সকালে হাতির উপর হাওদা চড়ল । পর্দার আড়ালে বসে ঘরে ফিরছি, এমন সময় দেখি, বনের পথ দিয়ে কে চলেছে, তার নবীন বয়েস। চূড়ায় তার বনফুলের মালা । হাতে তার ডালি ; তাতে শালুক ফুল, তাতে বনের ফল, তাতে খেতের শাক ।