পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী ছত্রধারিণীকে শুধোলেম, কোন ভাগ্যবতীর ছেলে পথ আলো করেছে।’ ছজধারিণী বললে, 'জান না ? ঐ তো দুয়োরানীর ছেলে । ওর মার জন্তে নিয়ে চলেছে শালুক ফুল, বনের ফল, খেতের শাক । তার পরে ঘরে ফিরে একলা বসে আছি, মুখে কথা নেই। রাজা এসে বললে, “তোমার কী হয়েছে, কী চাই।’ আমি বললেম, "আমার বড়ো সাধ, রোজ খাব শালুক ফুল, বনের ফল, খেতের শাক ; আমার ছেলে নিজের হাতে তুলে আনবে।’ রাজা বললে, “আচ্ছা বেশ, তার আর ভাবনা কী।’ সোনার পালঙ্কে বসে আছি, ছেলে ডালি নিয়ে এল । তার সর্বাঙ্গে ঘাম, তার মুখে রাগ। ডালি পড়ে রইল, লজ্জা পেলেম । তার পরে আমার কী হল কী জানি । Ç একলা বসে থাকি, মুখে কথা নেই। রাজা রোজ এসে আমাকে শুধোয়, ‘তোমার কী হয়েছে, কী চাই।’ স্বয়োরানী হয়েও কী চাই সে কথা লজ্জায় কাউকে বলতে পারি নে। তাই তোমাকে ডেকেছি, স্যাঙাংনি। আমার শেষ কথাটি বলি তোমার কানে, ‘ঐ দুয়ােরানীর দ্বখ আমি চাই।” স্যাঙাৎনি গালে হাত দিয়ে বললে, "কেন বলো তো ।” স্বয়োরানী বললে, “ওর ঐ বঁাশের বঁাশিতে মুর বাজল, কিন্তু আমার সোনার বঁাশি কেবল বয়েই বেড়ালেম, আগলে বেড়ালেম, বাজাতে পারলেম না।” বিদূষক কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করতে গেলেন। তিনি হলেন জয়ী । চন্দনে, হাতির দাতে, আর সোনামানিকে হাতি বোঝাই হল । দেশে ফেরবার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে রাজা পুজো দিলেন । পুজো দিয়ে চলে আসছেন— গায়ে রক্তবস্ত্র, গলায় জবার মালা, কপালে রক্তচন্দনের তিলক ; সঙ্গে কেবল মন্ত্রী আর বিদূষক।