পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> Rb" রবীন্দ্র-রচনাবলী বন্ধ হয় না। তাই চাপা আওয়াজ মুমূর্ধর খাবির মতো মাঝে মাঝে বেরোতে থাকে। একদিন সেই আওয়াজ গেল ব্ৰহ্মার কানে । তিনি ধ্যান ভেঙে একবার পৃথিবীর খোলা মাঠের দিকে তাকালেন। সেখানে ঘোড়ার চিহ্ন নেই । পিতামহ যমকে ডেকে বললেন, “নিশ্চয় তোমারই কীর্তি ! আমার ঘোড়াটিকে নিয়েছ ।” যম বললেন, "স্বষ্টিকর্তা, আমাকেই তোমার যত সন্দেহ। একবার মানুষের পাড়ার দিকে তাকিয়ে দেখো ।” ব্ৰহ্মা দেখেন, অতি ছোটো জায়গা, চার দিকে পাচিল তোলা ; তার মাঝখানে দাড়িয়ে ক্ষীণস্বরে ঘোড়াটি চিহি চিহি করছে । হৃদয় তার বিচলিত হল। মানুষকে বললেন, “আমার এই জীবকে যদি মুক্তি না দাও তবে বাঘের মতো ওর নখদন্ত বানিয়ে দেব, ও তোমার কোনো কাজে লাগবে না ।” মামুব বললে, “ছি ছি, তাতে হিংস্রতার বড়ো প্রশ্রয় দেওয়া হবে । কিন্তু, ধাই বল, পিতামহ, তোমার এই প্রাণীটি মুক্তির যোগ্যই নয়। ওর হিতের জন্যেই অনেক খরচে আস্তাবল বানিয়েছি । খাসা আস্তাবল ।” ব্ৰহ্মা জেদ করে বললেন, “ওকে ছেড়ে দিতেই হবে ।” মানুষ বললে, "আচ্ছা, ছেড়ে দেব। কিন্তু, সাত দিনের মেয়াদে ; তার পরে যদি বল, তোমার মাঠের চেয়ে আমার আস্তাবল ওর পক্ষে ভালো নয়, তা হলে নাকে খত দিতে রাজি আছি।” মানুষ করলে কী, ঘোড়াটাকে মাঠে দিলে ছেড়ে ; কিন্তু, তার সামনের ছুটে পায়ে কষে রশি বঁধিল । তখন ঘোড়া এমনি চলতে লাগল যে, ব্যাঙের চাল তার চেয়ে সুন্দর । Fš ব্ৰহ্মা থাকেন স্বার স্বর্গে ; তিনি ঘোড়াটার চাল দেখতে পান, তার হাটুর বাধন দেখতে পান না। তিনি নিজের কীর্তির এই ভাড়ের মুতো চালচলন দেখে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন। বললেন, “ভুল করেছি তো।” I মানুষ হাত জোড় করে বললে, “এখন এটাকে নিয়ে করি কী। আপনার ব্ৰহ্মলোকে যদি মাঠ থাকে তো বরঞ্চ সেইখানে রওনা করে দিই।” ব্ৰহ্মা ব্যাকুল হয়ে বললেন, “যাও যাও, ফিরে নিয়ে যাও তোমার আস্তাবলে ।” মানুষ বললে, “আদিদেব, মানুষের পক্ষে এ যে এক বিষম বোঝা ।” ব্ৰহ্মা বললেন, “সেই তো মানুষের মন্থন্তৰ।”