পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক Ei ్సలరీ বনমালী বাইরে থেকে ফিরে এসে যেমনি ঘরের জানলা খুলল অমনি তার চোখে পড়ল, সেই মেয়েটি ছাদের উপর হাত জোড় করে স্থির দাড়িয়ে । তখন গলির শেষ প্রাস্তে মল্লিকদের ঠাকুরঘরে আরতির কাসর ঘণ্টা বাজছে। অনেক ক্ষণ পরে ভূমিষ্ঠ হয়ে মেঝেতে মাথা ঠুকে ঠুকে বারবার সে প্রণাম করলে ; তার পরে চলে গেল । সেদিন বনমালী নীচে গিয়েই চিঠি লিখলে । লিখেই নিজে গিয়ে তখনি ডাকবাক্সে ফেলে দিয়ে এল । রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একমনে কামনা করতে লাগল, সে চিঠি যেন না পৌছয়। সকালবেলায় উঠে সেই বাড়ির দিকে যেন মুখ তুলে চাইতে পারলে না। সেই দিনই বনমালী মধুপুরে চলে গেল ; কোথায় গেল কাউকে বলে গেল না । কলেজ খোলবার সময় সময় ফিরে এল। তথন সন্ধ্যাবেলা । সামনের বাড়ির আগাগোড়া সব বন্ধ, সব অন্ধকার । ওরা সব গেল কোথায় । বনমালী বলে উঠল, “যাক, ভালোই হয়েছে।” ঘরে ঢুকে দেখে ডেস্কের উপরে একরাশ চিঠি। সব-নীচের চিঠির শিরোনাম মেয়েলি হাতের ছাদে লেখা, অজানা হাতের অক্ষরে, তাতে পাড়ার পোস্ট-আপিসের ছাপ । চিঠিখানি হাতে করে সে বসে রইল। লেফাফা খুললে না । কেবল আলোর সামনে তুলে ধরে দেখলে। জানালার ভিতর দিয়ে জীবনযাত্রার যেমন অস্পষ্ট ছবি, আবরণের ভিতর দিয়ে তেমনি অস্পষ্ট অক্ষর । একবার খুলতে গেল, তার পরে বাক্সের মধ্যে চিঠিটা রেখে চাবি বন্ধ করে দিলে ; শপথ করে বললে, “এ চিঠি কোনোদিন খুলব না।” পট যে শহরে অভিরাম দেবদেবীর পট আঁকে, সেখানে কারো কাছে তার পূর্বপরিচয় নেই। সবাই জানে, সে বিদেশী, পট আঁকা তার চিরদিনের ব্যাবলা । সে মনে ভাবে, "ধনী ছিলেম, ধন গিয়েছে, হয়েছে ভালো । দিনরাত দেবতার রূপ ভাবি, দেবতার প্রসাদে খাই, আর ঘরে ঘরে দেবতার প্রতিষ্ঠা করি। আমার এই মান কে কাড়তে পারে।” এমন সময় দেশের রাজমন্ত্রী মারা গেল। বিদেশ থেকে নতুন এক মন্ত্রীকে রাজা আদর করে আনলে। সেদিন তাই নিয়ে শহরে খুব ধুম।