পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S6 e রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি বলেন ‘কেমন আছ তা হলে সেই কথাটুকুতে দিন কেটে যায়, এক বেলা যদি একটু ফল আর জল গ্রহণ করেন তা হলে অন্নজল ওর নিজের মুখে রোচে । VG এ দিকে ইজলোকে খবর পৌছল, মানুষ মর্তকে লঙ্ঘন করে স্বৰ্গ পেতে চায়— এত বড়ো স্পর্ধা । ইন্দ্র প্রকাশ্যে রাগ দেখালেন, গোপনে ভয় পেলেন । বললেন, “দৈত্য স্বর্গ জয় করতে চেয়েছিল বাহুবলে, তার সঙ্গে লড়াই চলেছিল ; মানুষ স্বৰ্গ নিতে চায় দুঃখের বলে, তার কাছে কি হার মানতে হবে ।” মেনকাকে মহেন্দ্র বললেন, "যাও, তপস্যা ভঙ্গ করোগে ।” মেনকা বললেন, "স্নররাজ, স্বর্গের অস্ত্রে মর্তের মাস্থ্যকে যদি পরাস্ত করেন তবে তাতে স্বর্গের পরাভব । মানবের মরণবাণ কি মানবীর হাতে নেই।” ইন্দ্র বললেন, “সে কথা সত্য ।” 8 ফাল্গুনমাসে দক্ষিণহাওয়ার দোল লাগতেই মর্মরিত মাধবীলতা প্রফুল্প হয়ে ওঠে । তেমনি ঐ কাঠকুড়নির উপরে একদিন নন্দনবনের হাওয়া এসে লাগল, আর তার দেহমন একটা কোন উংস্থক মাধুর্যের উন্মেষে উন্মেষে ব্যথিত হয়ে উঠল। তার মনের ভাবনাগুলি চাকছাড়া মৌমাছির মতো উড়তে লাগল, কোথা তারা মধুগন্ধ পেয়েছে । ঠিক সেই সময়ে সাধনার একটা পাল| শেষ হল । এইবার তাকে যেতে হবে নির্জন গিরিগুহায় । তাই সে চোখ মেলল । সামনে দেখে সেই কাঠকুড়নি মেয়েটি খোপায় পরেছে একটি অশোকের মঞ্জরী, আর তার গায়ের কাপড়খানি কুমুস্তফুলে রঙ করা । যেন তাকে চেনা যায় অথচ চেনা যায় না । যেন সে এমন একটি জানা স্বর যার পদগুলি মনে পড়ছে না। যেন সে এমন একটি ছবি যা কেবল রেখায় টানা ছিল, চিত্রকর কোন খেয়ালে কখন এক সময়ে তাতে রঙ লাগিয়েছে । তাপস আসন ছেড়ে উঠল। বললে, “আমি দূর দেশে যাব।” কাঠকুড়নি জিজ্ঞাসা করলে, “কেন, প্রভু।” তপস্বী বললে, “তপস্তা সম্পূর্ণ করবার জন্যে ।”