পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وانقاذ

  • তার কথা আর কইব কী । সে নিজেই নিজের টংকারে ঝংকারে হংকারে ক্রেংকারে আকাশ কঁাপিয়ে রেখেছে। তার ভারে, তার জটিলতায়, তার জঞ্জালে পৃথিবীর বক্ষ ব্যথিত হয়ে উঠল। ভেবে পাই নে, এর অস্ত কোথায় । থাকের উপরে আর কত থাক উঠবে, গাঠের উপরে আর কত গাঠ পড়বে। এই প্রশ্নেরই জবাব ছিল ঐ গাছের পাতায় ।”

“বটে ? কী জবাব শুনি ।” “সে বলছে, প্ৰাণ যত ক্ষণ নেই তত ক্ষণ সমস্তই কেবল স্তৃপ, সমস্তই কেবল ভার। প্রাণের পরশ লাগবা মাত্রই উপকরণের সঙ্গে উপকরণ আপনি মিলে গিয়ে অখণ্ড সুন্দর হয়ে ওঠে। সেই সুন্দরকেই দেখো এই বনবিহারী । তারই বাশি তো বাজছে বটের ছায়ায় ।” তখন কবেকার কোন ভোররাত্রি । প্রাণ আপন স্বপ্তিশয্যা ছাড়ল ; সেই প্রথম পথে বাহির হল অজানার উদ্দেশে, অসাড় জগতের তেপাস্তর মাঠে । তখনও তার দেহে ক্লাস্তি নেই, মনে চিস্তা নেই ; তার রাজপুত্তরের সাঙ্গে না লেগেছে ধুলো, না ধরেছে ছিদ্র । সেই অক্লাস্ত নিশ্চিস্ত অম্লান প্রণটিকে দেখলেম এই আষাঢ়ের সকালে, ঐ বটগাছটিতে । সে তার শাখা নেড়ে আমাকে বললে, “নমস্কার ।” আমি বললেম, "রাজপুকুর, মরুদৈত্যটার সঙ্গে লড়াই চলছে কেমন বলে। তো।” সে বললে, “বেশ চলছে, একবার চার দিকে তাকিয়ে দেখো-না ।” তাকিয়ে দেখি, উত্তরের মাঠ ঘাসে ঢাকা, পুবের মাঠে আউশ ধানের অঙ্কুর, দক্ষিণে বাধের ধারে তালের সার ; পশ্চিমে শালে তালে মহুয়ায়, আমে জামে খেজুরে, এমনি জটলা করেছে যে দিগস্ত দেখা যায় না। আমি বললেন, “রাজপুৰুর, ধন্য তুমি । তুমি কোমল, তুমি কিশোর, আর দৈত্যটা হল যেমন প্রবীণ তেমনি কঠোর ; তুমি ছোটো, তোমার তুণ ছোটো, তোমার তীর ছোটো, আর ও হল বিপুল, ওর বর্ম মোটা, ওর গদা মন্ত। তবু তো দেখি, দিকে দিকে তোমার ধ্বজা উড়ল, দৈত্যটার পিঠের উপর তুমি পা রেখেছ ; পাথর মানছে হার, ধুলো দাসখত লিখে দিচ্ছে।”