পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী טף צ কার্তিকেয় । তত দিন বোধ হয় জানতে পারব না, সেখানে ধুলার আবরণে আপনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। বৃহস্পতি । পৃথিবীর রসই তো হল এই লুকোচুরিতে। ঐশ্বর্য সেখানে দরিত্রবেশে দেখা দেয়, শক্তি সেখানে অক্ষমের কোলে মাহুষ হয়, বীর্য সেখানে পরাভবের মাটির তলায় আপন জয়স্তম্ভের ভিত্তি খনন করে । সম্ভব সেখানে অসম্ভবের মধ্যে বাসা করে থাকে। যা দেখা দেয়, পৃথিবীতে তাকে মানতে গিয়েই ভুল হয় ; যা না দেখা দেয় তারই উপর চিরদিন ভরসা রাখতে হবে । কাতিকেয়। কিন্তু মুররাজ, আপনার ললাটের চিরোজ্জল জ্যোতি আজ স্নান হল কেন । বৃহস্পতি। মর্তে যে যাবেন তার গৌরবের প্রভ আজ দীপ্যমান হয়ে উঠুক । ইন্দ্র । দেবগুরু, জন্মের যে বেদনা সেই বেদন এখনি আমাকে পীড়িত করছে । আজ আমি দুঃখেরই অভিসারে চলেছি, তারই আহবানে আমার মনকে টেনেছে । শিবের সঙ্গে সতীর যেমন বিচ্ছেদ হয়েছিল, স্বর্গের আনন্দের সঙ্গে পৃথিবীর ব্যথার তেমনি বিচ্ছেদ হয়েছে ; সেই বিচ্ছেদের দুঃখ এত দিন পরে আজ আমার মনে রাশীকৃত হয়ে উঠেছে। আমি চললুম সেই ব্যথাকে বুকে তুলে নেবার জন্তে । প্রেমের অমৃতে সেই ব্যথাকে আমি সৌভাগ্যবর্তী করে তুলব। আমাকে বিদায় দাও। কাতিকেয় । মহেন্দ্র, আমাদের জন্যে পথ করে দাও, আমরা সেইখানেই গিয়ে তোমার সঙ্গে মিলব । স্বৰ্গ আজ দুঃখের অভিধানে বাহির হোক । বৃহস্পতি । আমরা পথের অপেক্ষাতেই রইলুম, দেবরাজ। স্বর্গ থেকে বাহির হবার পথ করে দাও, নইলে আমাদের মুক্তি নেই । কাতিকেয় । বাহির করে, দেবরাজ, স্বর্গের বন্ধন থেকে আমাদের বাহির করে – মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আমাদের পথ রচনা করো। বৃহস্পতি । তুমি স্বৰ্গরাজ, আজ তুমি স্বর্গের তপোভঙ্গ ক’রে জানিয়ে দাও যে, স্বৰ্গ পৃথিবীরই । কাতিকেয়। যারা স্বৰ্গকামনায় পৃথিবীকে ত্যাগ করবার সাধনা করেছে চিরদিন তুমি তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছ, আজ স্বয়ং স্বৰ্গকে সেই পথে নিয়ে যেতে হবে । ইন্দ্র। সেই বাধার ভিতর দিয়ে মুক্তিতে যাবার পথ— বৃহস্পতি । যে মুক্তি আপন আনন্দে চিরদিনই বাধার সঙ্গে সংগ্রাম করে।