পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 9) של যায় আইসক্রিমের। এমন ক’রে খায় লে দেখবার যোগ্য। মজুমদারদের জামাইবাবুর সঙ্গে অনেকটা মেলে। த: একদিন ঝমাঝম্ বৃষ্টি। বলে বলে ছবি আঁকছি। এখানকার মাঠের ছবি । উত্তর দিকে বরাবর চলে গেছে রাঙা মাটির রাস্তা— দক্ষিণ দিকে পোড়ো জমি, উচুনিচু ঢেউ-খেলানো, মাঝে মাঝে বাকড় বুনো খেজুর । দূরে দুটো-চারটে তালগাছ আকাশের দিকে কাঙালের মতো তাকিয়ে । তারই পিছনে জমে উঠেছে ঘন মেঘ, যেন একটা প্রকাও নীল বাঘূ ওং পেতে আছে, কখন এক লাফে মাঝ-আকাশে উঠে স্বৰ্যটাকে দেবে থাবার ঘা। বাটিতে রঙ গুলে তুলি বাগিয়ে এইসব একে চলেছি। দরজায় পড়ল ঠেলা। খুলে দেখি ডাকাত নয়, দৈত্য নয়, কোটালের পুত্তর নয়— সেই লোকটা । সর্বাঙ্গ বেয়ে জল ঝরছে, ময়লা ভিজে জামা গায়ে লেপটে গেছে, কোচার ডগায় কাদা, জুতোয় কাদার পিত্তি। আমি বললুম, এ কী ! সে বললে, যখন বেরিয়েছিলুম খট্‌খটে রোদজুর। আদ্ধেক পথে আসতে বৃষ্টি নামল । তোমার ঐ বিছানার চাদরটা যদি দাও তো কাপড় ছেড়ে গায়ে জড়িয়ে বসি । হুকুম পাবার সবুর সইল না। চট্‌ ক’রে থাটের থেকে লক্ষৌছিটের ঢাকাটা টেনে নিয়ে তাই দিয়ে মাথাটা মুছে কাপড় ছেড়ে সেটা গায়ে জড়িয়ে বসল। ভাগিাস কাশ্মীরি জামিয়ারটা পাতা ছিল না । বললে, দাদা, তোমাকে একটা গান শোনাব । কী করি, ছবি-জাক বন্ধ করতে হল । সে শুরু করলে— ভাবো ঐক্যস্ত নরকাস্তকারীরে, নিতান্ত কৃতাস্ত-ভয়াস্ত হবে ভবে । আমার মুখের ভাব দেখে তার কী সন্দেহ হল জানি নে ; জিগেল করলে, কেমন লাগছে । আমি বললুম, জীবনের শেষদিন পর্যস্ত তোমাকে গলা সাধতে হবে লোকালয় থেকে দূরে বসে। তার পরে বুঝে নেবেন চিত্রগুপ্ত, যদি সইতে পারেন । সে বললে, পুপেদিদিও হিন্দুস্থানি ওস্তাদের কাছে গান শেখে, সেইখানে আমাকে বসিয়ে দিলে কেমন হয়। আমি বললুম, পূপেদিদিকে যদি রাজি করাতে পার তা হলে কথা নেই। সে বললে, পুপেদিদিকে আমি বড়ো ভয় করি। এই পর্যন্ত শুনে আমার শ্রোতা পুপেদিদি খুব ছেলে উঠল। তাকে কেউ ভয় করে,