পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০১

সে >bra) একটি সর্বনামধারী লে, কেবলমাত্র বাক্য দিয়ে তৈরি । সেইজন্তে একে নিয়ে যা-তা করা সম্ভব, কোনোখানে এলে কোনো প্রশ্নের স্থচোট খাবার আশঙ্কা নেই। কিন্তু অনাস্থষ্টির চাক্ষুষ প্রমাণ দেবার জন্তে একজন শরীরধারী জোগাড় করতে হয়েছে। সাহিত্যের মামলায় কেস্ট যখনই বড়ো বেশি বেসামাল হয়ে পড়ে তখনই এ লোকটা সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত । কিছুই বাধে না । আমার মতো মোক্তারের ইশারা পেলেই সে অম্লানমুখে বলতে পারে যে, কাচড়াপাড়ার কুম্ভমেলায় গঙ্গাস্বান করতে গিয়ে কুমীরে ধরেছিল তার টিকির ডগা । সেটা গেল তলিয়ে, বোট-ছেড়া মানবদেহের বাকি অংশটুকু উঠে এসেছে ডাঙায়। আরও একটু চোখ টিপে দিলে সে নির্লজ্জ হয়ে বলতে পারে, মানোয়ারী জাহাজের ডুবুরি গোরা সাত মাস পাক ঘেটে গোটা পাঁচ-ছয় চুল ছাড়া বাকি টিকিটা উদ্ধার করে এনেছে, বকশিয পেয়েছে এককালীন সোয়া তিন টাকা । পুপুদিদি তবু যদি বলে ‘তার পরে তা হলে তখনি শুরু করবে, নীলরতন ডাক্তারের পায়ে ধরে বললে, দোহাই ডাক্তারবাবু, ওষুধ দিয়ে টিকিটা জোড় দিয়ে লাগিয়ে দাও, নইলে তেলোর কাছে প্রসাদী ফুল বাধতে পারছি নে । তিনি সন্ন্যাসীদত্ত বজ্ৰজটা মলম লাগিয়ে দিতেই টিকিটা একেবারে মরিয়া হয়ে বেড়ে চলেছে, অফুরান একট। কেঁচোর মতো। পাগড়ি পরলে পাগড়িটা বেলুনের মতো ফেপে উঠতে থাকে, মাথার বালিশটার উপর চুড়ে তৈরি হতে থাকে দৈত্যপুরীর ব্যাঙের ছাতার মতো । বাধা মাইনে দিয়ে নাপিত রাখতে হল। প্রহরে প্রহরে তাকে দিয়ে ব্ৰহ্মতালু চাচিয়ে নিতে হচ্ছে । তবু যদি শ্রোতার কৌতুহল না মেটে তা হলে সে করুণ মুখ ক’রে বলতে থাকে যে, মেডিক্যাল কলেজের সার্জন-জেনেরাল হাতের আস্তিন শুটিয়ে বলে ছিল ; তার ভীষণ জেদ, মাথার ঐ জায়গাটাতে ইস্কুপ দিয়ে ফুটো ক’রে সেইখানে রবারের ছিপি এটে গালা লাগিয়ে শিলমোহর ক’রে দেবে, ইহকাল-পরকালে ওখান দিয়ে আর টিকি গজাতে পারবে না। চিকিৎসাটা ইহুকাল ডিঙিয়ে পরকালেই গিয়ে ঠেকবে, এই আশঙ্কায় ও কোনোমতেই রাজি হল না । আমাদের এই "লে" পদার্থটি ক্ষণজন্মা বটে ; এমনতরো কোটিকে গোটিক মেলে। মিথ্যে কথা বানাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিভা। আমার আজগবি গল্পের এত বড়ো উত্তরসাধক ওস্তাদ বহু ভাগ্যে জুটেছে। গল্প-প্রশ্নের উত্তরপাড়ার এই যে মানুষ, মাঝে মাঝে একে পুপুদিদির কাছে এনে হাজির করি— দেখে তার বড়ো চোখ আরও বড়ো হয়ে ওঠে। খুশি হয়ে বাজার থেকে গরম জিলিপি এনে খাইয়ে দেয় – লোকটা অসম্ভব জিলিপি ভালোবালে, আর ভালোবালে শিকদারপাড়া গলির চমচমূ । পুপুদিদি জিগেল