পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে ఏd আমাকে পুজো করবে ওরা । আমি বললুম, বেশ কথা । বন্ধুদের খবর দেওয়া গেল। তারা খুব খুশি । বললে, একটা কাজের মতে কাজ বটে। পৃথিবীর উপকার হবে। ক'জনে মিলে একটা সভ করলুম, তার নাম দেওয়া গেল শিবা-শোধন-সমিতি । পাড়ায় আছে অনেক কালের একটা পোড়ো চণ্ডীমণ্ডপ । সেখানে রোজ রাত্তির নটার পরে শেয়াল মানুষ করার পুণ্যকর্মে লাগা গেল । জিজ্ঞাসা করলুম, বংগ, তোমাকে জ্ঞাতিরা কী নামে ডাকে । শেয়াল বললে, হোঁহে । আমরা বললুম, ছি ছি, এ তো চলবে না । মানুষ হতে চাও তো প্রথমে নাম বদলাতে হবে, তার পরে রূপ। আজ থেকে তোমার নাম হল শিবুরাম । সে বললে, আচ্ছা । কিন্তু মুখ দেখে বোঝা গেল, হোঁহে নামটা তার যেরকম মিষ্টি লাগে শিবুরাম তেমন লাগল না। উপায় নেই, মানুষ হতেই হবে। প্রথম কাজ হল তাকে দু পায়ে দাড় করানো । অনেক দিন লাগল । বহু কষ্টে নড় বড়, করতে করতে চলে, থেকে থেকে পড়ে পড়ে যায় । ছ মাস গেল দেহটাকে কোনোমতে খাড়া রাখতে। থাবাগুলো ঢাকবার জন্য পরানো হল জুতো মোজা দস্তানা । অবশেষে আমাদের সভাপতি গৌর গোসাই বললেন, শিবুরাম, এইবার আয়নায় তোমার দ্বিপদী ছন্দের মূতিটা দেখো দেখি, পছন্দ হয় কিনা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘুরে ফিরে ঘাড় বেঁকিয়ে শিবুরাম অনেক ক্ষণ ধরে দেখলে । শেষকালে বললে, গোসাইজি, এখনো তোমার সঙ্গে তো চেহারার মিল হচ্ছে না । গোসাইজি বললেন, শিবু, সোজা হলেই কি হল । মানুষ হওয়া এত সোজা নয়। বলি, লেজটা যাবে কোথায় । ওটার মায়া কি ত্যাগ করতে পার । শিবুরামের মুখ গেল শুকিয়ে। শেয়ালপাড়ায় দশ-বিশ গায়ের মধ্যে ওর লেজ ছিল বিখ্যাত । সাধারণ শেয়ালরা ওর নাম দিয়েছিল ‘খালা-লেজুড়ি' । বারা শেয়ালি-সংস্কৃত জানত তারা সেই ভাষায় ওকে বলত, ‘স্বলোমলাঙ্গুলী’ । ছ দিন গেল ওর ভাবতে, তিন রাত্রি ওর ঘুম হল না। শেষকালে বৃহস্পতিবারে এসে বললে, রাজি । পাটুকিলে রঙের বাকড়া রোয়াওয়ালা লেজটা গেল কাটা, একেবারে গোড়া ঘেঁষে ।