পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९९२ রবীন্দ্র-রচনাবলী মেয়ে দেয় না। একজন সামান্ত পনেরোদাতি ওদের কেট্‌কু নাড় খেতে গিয়ে হঠাৎ দম আটকিয়ে মারা গেল, হাজারদাতির পাড়ায় তাকে পোড়াবার লোক পাওয়াই গেল না। তাকে লুকিয়ে ভাসিয়ে দিলে চৌচঙ্গি নদীর জলে । তাই নিয়ে নদীর দুই ধারের লোকেরা খেসারতের দাবি করে নালিশ করেছিল, লড়েছিল প্রিভিকেন্সিল পর্যন্ত । আমি ইপিয়ে উঠে বললুম, থামো, থামো ! কিন্তু জিগেল করি, তুমি যে কাহিনীটা আওড়ালে তার বিশেষ গুণটা কণী । ওর গুণটা এই, এটা কুলের আঁঠির চাটনি নয়। যা কিছুই জানি নে তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবার শখ মেটালে কোনো নালিশের কারণ থাকে না । কিন্তু, এতেও যে আছে উচু দরের হালি তা আমি বলি নে । বিশ্বাস করবার অতীত যা তাকেও বিশ্বাস করবার যোগ্য করতে পার যদি, তা হলেই অদ্ভুত রসের গল্প জমে। নেহাত বাজারে-চলতি ছেলে-ভোলাবার সস্তা অত্যুক্তি যদি তুমি বানাতে থাক তা হলে তোমার অপযশ হবে, এই আমি বলে রাখলুম। আমি বললেম, আচ্ছা, এমন করে গল্প বলব যাতে পুপুদিদির বিশ্বাস ভাঙতে ওঝা ডাকতে হবে । ভালো কথা, কিন্তু লাটসাহেবের বাড়িতে যাওয়া বলতে কী বোঝায় । বোঝায়, তুমি বিদায় নিলেই ছুটি পাই । একবার বসলে উঠতে চাও না, তাই ‘তুমি যাও’ অঙ্গুরোধটা সামান্ত একটু ঘুরিয়ে বলতে হল । বুঝেছি, আচ্ছা, তবে চললুম। \\:) সার্কাস দেখে আসার পর থেকে পুপুদিদির মনটা যেন বাঘের বাসা হয়ে উঠল। বাঘের সঙ্গে, বাঘের মালির সঙ্গে সর্বদা তার আলাপ চলছে । আমরা কেউ যখন থাকি নে তখনই ওদের মজলিস জমে। আমার কাছে নাপিতের খবর নিচ্ছিল ; আমি বললুম, নাপিতের কী দরকার। পুপু জানালে, বাঘ ওকে অত্যস্ত ধরে পড়েছে। খোচা খোচা হয়ে উঠেছে ওর গোফ, ও কামাতে চায় । আমি জিগেল করলেম, গোফ কামানোর কথা ওর মনে এল কী করে।