পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র-রচনাবলী এইটুকু শুনেই সে ব’লে উঠল, এ চলবে না, দাদা। পাতুর স্ত্রীকে তুমি চক্ষে দেখ নি তো । মকদ্দমায় ঐ মহিলাটি যদি জেতে তা হলে যে আসামীপক্ষ আফিম খেয়ে মরবে ! ভয় কী, কথা দিচ্ছি, হার হোক, জিত হোক, টিকিয়ে রাখব তোমাকে । আচ্ছা, ব'লে যাও । হাত জোড় ক’রে তুমি হাকিমকে বললে, হজুর, ধর্মাবতার, সাত পুরুষে আমি ওর স্বামী নই ৷ উকিল চোখ রাঙিয়ে বললে, স্বামী নও, তার মানে কী । তুমি বললে, তার মানে, এ পর্যস্ত আমি ওকে বিয়ে করি নি, দ্বিতীয় আর কোনো মানে আপাতত কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি নে । রামসদয় মোক্তার খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, আলবত তুমি ওর স্বামী, মিথ্যে কথা বোলো না । তুমি জজ সাহেবের দিকে ত কিয়ে বললে, জীবনে বিস্তর মিথ্যে বলেছি, কিন্তু ঐ বুড়িকে সজ্ঞানে স্ব-ইচ্ছায় বিয়ে করেছি, এত বড়ো দিগগজ মিথ্যে বানিয়ে বলবার তাকত আমার নেই। মনে করতে বুক কেঁপে ওঠে । তখন ওরা সাক্ষী তলব করলে পয়ত্রিশজন গাঁজাখোরকে । একে একে তারা গাজাটেপা আঙুল তোমার মূপে বুলিয়ে বলে গেল, চেহারাটা একেবারে হুবহু পাতুর ; এমন-কি, বা কপালের আবটা পর্যস্ত । তবে কিনা— মোক্তার তেরিয়া হয়ে উঠে বললে, ‘তবে কিন; আবার কিসের । ওরা বললে, সেই রকমের পাতুই বটে, কিন্তু সেই পাতুষ্ট, হলপ ক’রে এমন কথা বলি কী ক’রে । ঠাকুরুনকে তো জানি, বন্ধু কম দুঃখ পায় নি, অনেক কাটা ক্ষয়ে গেছে ওর পিঠে। তার দাম বাচালে গাজার খরচে টানাটানি পড়ত না । তাই বলছি হুজুর, আদালতে স্থলপ ক'রে ভদ্রলোকের সর্বনাশ করতে পারব না । মোক্তার চোখ রাঙিয়ে বললে, তা হলে এ লোকটা কে বলে। দ্বিতীয় পাতু বানাবার শক্তি ভগবানেরও নেই । গেজেলের সর্দার বললে, ঠিক বলেছ বাবা, এরকম ছিষ্ট দৈবাৎ হয় । ভগবান নাকে খত দিয়েছেন, এমন কাজ আর করবেন না। তবু তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, একটা কোনো সয়তান ভগবানের পাণ্ট জবাব দিয়েছে। একেবারে ওস্তাদের হাতের নকল, পাকা জালিয়াতের কাজ। পাতুর দেহখানা শুকিয়ে শুকিয়ে ওর নাক চিমলিয়ে বেঁকে