পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९8७ রবীন্দ্র-রচনাবলী তখনি ছুটলে তেলিনিপাড়ার দিঘির ঘাটে। কপাল ভালো, ঠিক তক্ষুনি তোমার দেহটা উঠছে ভেলে । পাতুর দেহ ডাঙায় চিত ক’রে ফেলে পুরোনো খোলটা জুড়ে বসলে । মস্ত একটা ইপি ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডাক দিলে, ওরে পাতু । তখনই ওর দেহটা উঠল খাড়া হয়ে। পাতু বললে, ভায়া, সঙ্গে সঙ্গেই ছিলুম। মনটা অস্থির ছিল গাজার মোতাতে। ইচ্ছে করত, আত্মহত্যে করি, কিন্তু সে রাস্তাও তুমি জুড়ে বলেছিলে। বেঁচে যখন ছিলুম তখন বেঁচে থাকবার শখ ছিল যোলো আনা ; যেমনি মরেছি অমনি আর যে কোনোমতেই কোনো কালেই মরতে পারব না, এই দুঃখ অসহ হয়ে উঠল। সামান্য একটা দড়ি নিয়ে গলায় ফাল লাগাব, এটুকু যোগ্যতাও রইল না। তুমি বললে, যা হবার তা তো হল, এখন চলো আদালতে । জজলাহেবকে ব’লে তোমার গাজার বরাদ করে দেব । গেলে আদালতে। জজলাহেব পাতুকে ধমক দিয়ে বললে, এ বুড়ি তোমার স্ত্রী কি না সত্যি ক’রে বলে । পাতু বললে, হজুর, সত্যি ক’রে বলতে মন যায় না। কিন্তু ভদ্রলোকের ছেলে মিথ্যে ব'লে পাপ করব কেন । নিশ্চয় জানি যে, পাপের সঙ্গে সঙ্গে উনিই পিছন পিছন ছুটবেন। উনিই আমার প্রথম পক্ষের পরিবার। সাহেব জিগেস করলেন, আরও আছে না কি । পাতু বললে, না থাকলে মান রক্ষণ হয় না যে। কুলীনের ছেলে । নৈকযুকুলীন । রবিবার দিনে পুপুদিদি পড়েছে গল্পটা। আমাকে জিগেস করলে, আচ্ছা দাদামশায়, তুমি যে লিখেছ একরাশ ইংরেজি বই নিয়ে কোন কলেজের জন্তে বই লিখছ । তোমার আবার কলেজ কোথায়, তা ছাড়া কখনো তে দেখি নি ঐরকমের বই খুলতে। তুমি তো লেখ কেবল ছড়া । স্পষ্ট জবাব না দিয়ে একটুখানি হাসলুম। আচ্ছা দাদামশায়, তুমি কি সংস্কৃত জান। দেখো পুপুদিদি, এরকম প্রশ্নগুলো বড়ো রূঢ়। মুখের সামনে জিগেল করতে নেই। |