পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(筑 २8A ని সকালবেলায় পুপেদিদি উদবিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলে, দাদামশায় সে’কে নিয়ে সব গল্প কি ফুরিয়ে গেল । দাদামশায় খবরের কাগজ ফেলে রেখে চশমা কপালে তুলে বললে, গল্প ফুরোয় না, গল্প-বলিয়ের দিন ফুরোয় । আচ্ছা, ও তো গা ফিরিয়ে পেলে, তার পরে কী হল বলো-না। আবার ওকে গা খাটিয়ে মরতে হবে, গায়ে পড়ে নিতে হবে নানা দায় । কখনো গায়ে ফু দিয়ে বেড়াবে। কখনো গালমন্দ গা পেতে নেবে, কখনো নেবে না। কখনো কাজে গা লাগবে, কখনো লাগবে না। ওর গা থাকা সত্ত্বেও কুঁড়েমি দেখে লোকে বলবে, কিছুতে ওর গা নেই। কখনো গা ঘুরবে, কখনো গা কেমন করবে, গা ঘুলিয়ে যাবে। কখনো গা ভার হবে, কখনো গা মাটি-মাটি করবে, গা ম্যাজ ম্যাজ করবে, গা সিরসির করবে, গা ঘিনঘিন করতে থাকবে। সংসারটা কখনো হবে গ+সওয়া, কপনো হবে উণ্টো । কারও কথায় গা জ'লে যাবে, কারও কথায় গা যাবে জুড়িয়ে । বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে গায়ে জর আসবে। এত মুশকিল একখানা গা নিয়ে। আচ্ছা, দাদামশায়, ও যখন আর-একজনের গা নিয়ে বেড়াত তখন মুশকিল হত কার। গা কেমন করলে ওর করত কি তার করত। শক্ত কথা । আমি তো বলতে পারব না, ওকে জিগেস করলে ওরও মাথা ঘুরে যাবে। দাদামশায়, গা নিয়ে এত হাঙ্গাম আমি কখনো ভাবিনি । ঐ হাঙ্গামগুলো জোড়া দিয়েই তো যত গল্প। গায়ের উপর সওয়ার হয়ে গল্প ছুটেছে চার দিকে । কোনো গা গল্পের গাধা, কোনো গা গল্পের রাজহস্তী । তোমার গা কী, দাদামশায় । বলব না। অহংকার করতে বারণ করে শাস্ত্রে। দাদামশায়, সে’র গল্প তুমি থামিয়ে দিলে কেন । বলি তা হলে। কুঁড়েমির স্বৰ্গ সকল স্বর্গের উপরে। সেখানে যে ইন্দ্র বলে অমৃত খাচ্ছেন হাজার চক্ষু আধখানা বুজে, তিনি হলেন গল্পের দেবতা। আমি তার ভক্ত ; কিন্তু তার সভায় আজকাল চুকতেই পারি নে। আমার ভাগে গল্পের প্রসাদ অনেকদিন থেকে বন্ধ । কেন ।