পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૮ જ রবীন্দ্র-রচনাবলী হয়ে এল। দেরাজ খুলে থলিট বের করলেম । সাত দিনের না-কামানো-দাড়ি-ওয়ালা ওদের সর্দার উৎসাহিত হয়ে চাদর পেতে ধরলে । থলি ঝাড়তে বেরোল এক টাকা, ন আনা, তিন পয়সা । মাসের দু দিন বাকি, দর্জির দেনার জন্তে টানাটানি করে ঐটুকু রেখেছিলেম। গান ছেড়ে গাল শুরু করলে । বললে, অগাধ টাকা, চিরটা দিন পায়ের উপর পা দিয়ে গদিয়ান হয়ে বসে আছ ; ভুলেছ, যেদিন মরবে সেদিন তোমার মতো লক্ষপতির যে দর আর আমাদের ছেড়া-ট্যান-পরা ভিখিরিরও সেই দর। এ কথাগুলো পুরোনো ঠেকল, কিন্তু ঐ লক্ষপতি বিশেষণটাতে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল । এই হল শুরু । তার পরে ইতিমধ্যে পচিশটা সভার সভ্য হয়েছি । বাংলাদেশে সরকারি সভাপতি হয়ে দাড়ালেম । আদি ভারতীয় সংগীতলভ, কচুরিপানা-ধ্বংসন সভা, মুতসংকার সভা, সাহিত্যশোধন সভা, তিন চণ্ডীদাসের সমন্বয় সভা, ইক্ষুছিবড়ের পণ্যপরিণতি সভা, খন্তানে খনার লুপ্তভিটা-সংস্কার সভা, পি জরাপোলের উন্নতিসাধিনী সভা, ক্ষেীরব্যয়নিবারিণী-দাড়ি-গোফ রক্ষণী সভা— ইত্যাদি সভার বিশিষ্ট সভ্য হয়েছি । অনুরোধ আসছে, ধনুষ্টঙ্কারতত্ত্ব বইখানির ভূমিকা লিখতে, নব্যগণিতপাঠের অভিমত দিতে, ভুবনডাঙায় ভবভূতির জন্মস্থাননির্ণয় পুস্তিকার গ্রন্থকারকে আশীৰ্বাদ পাঠাতে, রাওলপিণ্ডির ফরেস্ট, অফিসারের কস্তার নামকরণ করতে, দাড়িকামানো সাবানের প্রশংসা জানাতে, পাগলামির ওষুধ সম্বন্ধে নিজের অভিজ্ঞতা প্রচার করতে । দাদামশায়, মিছিমিছি তুমি এত বেশি বক যে তোমার সময় নেই বললে কেউ বিশ্বাস করে না। আজ তোমাকে বলতেই হবে, গা ফিরে পেয়ে কী করলে সে । বিষম খুশি হয়ে চলে গেল দমদমে । দমদমে কেন । অনেক দিন পরে নিজের কান দুটো ফিরে পেয়ে স্বকৰ্ণে আওয়াজ শোনবীর শখ ওর কিছুতে মিটতে চায় না। শুামবাজারের মোড়ে কান পেতে থাকে ট্র্যামের বাসের ঘড়ঘড়ানিতে । টিটেগড়ের চটকলের দারোয়ানের সঙ্গে ভাব করে নিয়েছে, তার ঘরে বলে কলের গর্জন শুনে ওর চোখ বুজে আসে। ঠোঙায় করে রসগোল্লা আর আলুর দম নিয়ে বার্ন কোম্পানির কামারের দোকানে বলে খেতে যায়। বন্দুকের তাক অভ্যেস করতে গোরা ফৌজ গেছে দমদমে, ও তারই ধুম ধুম শৰ শুনছিল জারামে, টর্গেটের ও পারে বলে। আনন্দে আর থাকতে পারলে না, টার্গেটের এ ধারে মুখ