পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে ২৬৫ লাখখানেক ঝিঝি-পোকা আমদানি করব আমাদের পানাপুকুরের ধারের স্যাওড়াবন থেকে । তারা চাদামামার নিদমহলের পশ্চিম দিকের খিড়কির দরজা দিয়ে বাকে ঝাকে ঢুকে সবাই মিলে তোমার বিছানার চাদরটাতে দিত টান স্বৰ্ড স্থা ক’রে । তার উপরে তোমাকে নামিয়ে আনত । তাদের ঝিঝি ঝিঝি শব্দে চাদনি-চকে ঝিমিয়ে পড়ত চাদের পাহারাওয়ালা । সমস্ত রাস্তায় বায়না দিয়ে রেখেছিলুম জোনাকির অালোধারীর দলকে । বঁাশতলার বাক গলি দিয়ে তোমাকে নিয়ে চলত, থস্ থস্ শব্দ করত ঝরে-পড়া শুকনো পাতাগুলে। ঝর ঝর করতে থাকত নারকেলের ডাল। গন্ধে-ভুর-ভুর শর্ষেখেতের আল বেয়ে যখন এসে পড়তে তিরূপুনির ঘাটে তখন ধামা-ভরা বিন্নিধানের খই নিয়ে ডাক দিতুম গঙ্গামায়ের শুড়তোলা মকরকে, তোমাকে চড়িয়ে দিতেম তার পিঠে । ডাইনে রায়ে তার লেজের ঠেলায় জল উঠত কলকলিয়ে । তিন পহর রাতে শেয়ালগুলো ডাঙায় দাড়িয়ে জিগেস করত, ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া ! আমি বলতুম, চুপ রও, কুছ নেই হুয়া। এই যাত্রাপথে পেচা আর বাদুড়ের সঙ্গেও কিছু আপোষে বন্দোবস্তের কথা ছিল । তাদের কাজে লাগাতুম। ভোর সাড়ে চারটের সময় শুকতারা নেমে পড়ত পশ্চিম-আকাশে, পূর্ব-আকাশে আলোর রেখায় দেপা দিত সকালবেলার তর্জনীতে সোনার আংটি থেকে ঠিক্রে-পড়া সংকেত । সদ্যজেগে-ওটা কাক তেঁতুলের ডালে বলে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করত, কা-কা ? আমি যেমনি বলতুম কিছু না', অমনি দেখতে দেখতে সব যেত মিলিয়ে— তুমি জেগে উঠতে তোমার বিছানায় । পুপুদিদি একটুখানি হেসে বললে, এই-যে আমার ছেলেমামুষির কাহিনীটি শোন গেল— এটি এত ইনিয়ে-বিনিয়ে ব’লে তোমার কী আনন্দ হল । আমার হিংসুকে স্বভাব ছিল, এইটে জানাবার জন্যে তোমার এতই উৎসাহ ! আর, আমাদের বিলিতিআমড়া গাছের পাক আমড়াগুলো পেড়ে নিয়ে স্বকুমারদাকে লুকিয়ে দিয়ে আলতুম, আমড়া সে ভালোবাসত ব'লে ; চুরির অপবাদটা হত আমার, আর ভোগ করত সে– সে কথাটা চেপে গেছ । সুকুমারদা নাহয় অঙ্কই ভালো কষত, কিন্তু আমার বেশ মনে আছে একদিন সে "অবধান’ কথাটার মানে ভেবে পাচ্ছিল না, আমি স্নেটে লিখে আড় করে ধরে তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলুম— এ কথাগুলো বুঝি তোমার গল্পের মধ্যে পড়ে না ? আমি বললুম, আমার খুশির কারণ এ নয় যে, মনের জালায় তুমি মুকুমারদার যৌবরাজ্য মানতে চাও নি। তার উপরে তোমার হিংসের কারণ ছিল আমার উপর