পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* রবীন্দ্র-রচনাবলী জানিই নে তো। সবাই মিলে ধরে নিয়েছি যে জানি, সেই আপোষে ধরে নেওয়ার উপরেই আমাদের কারবার। কারবার তো ভালোই চলছে। চলছে, কিন্তু এ সত্যযুগের চলা নয়। সেই কথাই তোমাদের বলছিলুম— সত্যযুগে মানুষ দেখার জানা জানত না, ছোওয়ার জানা জানত না, জনিত একেবারে হওয়ার জানা । মেয়েদের মন প্রত্যক্ষকে অঁাকড়ে থাকে ; ভেবেছিলেম আমার কথাটা অত্যস্ত অবাস্তব ঠেকবে পুপুর কাছে, ভালোই লাগবে না । দেখলুম একটু ঔংস্থক্য হয়েছে । বললে, বেশ মজা । একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেই বললে, আচ্ছা, দাদামশায়, আজকাল তো সায়ান্সে অনেক বুজ রুগি করছে ; মরা মানুষের গান শোনাচ্ছে, দূরের মামুষের চেহারা দেখাচ্ছে, আবার শুনছি সিসেকে সোনা করছে— তেমনি একদিন হয়তে এমন একটা বিদ্যুতের খেলা খেলাবে যে ইচ্ছে করলে একজন আর-এক জনের মধ্যে মিলে যেতে পারবে । অসম্ভব নয়। কিন্তু, তুমি তা হলে কী করবে। কিছুষ্ট লুকোতে পারবে না। সর্বনাশ ! সব মানুষেরই যে লুকোবার আছে অনেক । লুকোনো আছে ব’লেই লুকোবার আছে। যদি কারও কিছুই লুকোনো না থাকত তা হলে দেখা-বিনতি খেলার মতো সবার সব জেনেই লোকব্যবহার হত । কিন্তু, লজ্জার কথা যে অনেক আছে । লজ্জার কথা সকলেরই প্রকাশ ছলে লজ্জার ধার চলে যেত । আচ্ছা, আমার কথা কী বলতে যাচ্ছিলে তুমি । সেদিন আমি তোমাকে জিগেস করেছিলুম, তুমি যদি সত্যযুগে জন্মাতে তবে আপনাকে কী হয়ে দেখতে তোমার ইচ্ছে হত। তুমি ফস ক'রে বলে ফেললে, কাবুলি বেড়াল । পুপে মস্ত ক্ষাপা হয়ে বলে উঠল, কথখনো না । তুমি বানিয়ে বলছ । আমার সত্যযুগটা আমার বানানো হতে পারে কিন্তু তোমার মুখের কথাট তোমারই। ওটা ফল করে আমি-হেন বাচালও বানাতে পারতুম না। এর থেকে তুমি কি মনে করেছিলে আমি খুব বোকা । এই মনে করেছিলুম যে, কাবুলি বেড়ালের উপর অত্যন্ত লোভ করেছিলে অথচ কাবুলি বেড়াল পাবার পথ তোমার ছিল না, তোমার বাবা বেড়াল জঙ্কটাকে দেখতে