পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে こbr> পারতেন না। আমার মতে সত্যযুগে বেড়াল কিনতেও হ’ত না, পেতেও হ’ত না, ইচ্ছে করলেই বেড়াল হতে পারা যেত । মাহব ছিলুম, বেড়াল হলুম— এতে কী স্থবিধেটা হল । তার চেয়ে যে বেড়াল কেনাও ভালো, না কিনতে পারলে না পাওয়া ভালো । ঐ দেখো, সত্যযুগের মহিমাটা মনে ধারণা করতে পারছ না। সত্যযুগের পূপে আপনার সীমানা বাড়িয়ে দিত বেড়ালের মধ্যে। সীমানা লোপ করত না । তুমি তুমিও থাকতে, বেড়ালও হতে । তোমার এ-সব কথার কোনো মানে নেই । সত্যযুগের ভাষায় মানে আছে। সেদিন তো তোমাদের অধ্যাপক প্রমথবাবুর কাছে শুনেছিলে, আলোকের অণুপরমাণু বৃষ্টির মতো কণাবর্ষণ ও বটে আবার নদীর মতে তরঙ্গধারাও বটে। আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি, হয় এটা ময় ওটা ; কিন্তু বিজ্ঞানের বুদ্ধিতে একই কালে দুটোকেই মেনে নেয়। তেমনি একই কালে তুমি পুপুও বটে, বেড়াল ও বটে— এটা সত্যযুগের কথা । দাদামশায়, যতই তোমার বয়স এগিয়ে চলছে ততই তোমার কথাগুলো অবোধ্য হয়ে উঠছে, তোমার কবিতারই মতে । অবশেষে সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যাব তারই পূর্বলক্ষণ । সেদিনকার কথাটা কি ঐ কাবুলি বেড়ালের পরে আর এগোল না । এগিয়েছিল । স্বকুমার এক কোণে বসে ছিল, সে স্বপ্নে কথা বলার মতো ব’লে উঠল, আমার ইচ্ছে করে শালগাছ হয়ে দেখতে । স্বকুমারকে উপহসিত করবার স্থযোগ পেলে তুমি খুশি হতে । ও শালগাছ হতে চায় শুনে তুমি তে হেসে অস্থির । ও চমকে উঠল লজ্জায় । কাজেই ও বেচারির পক্ষ নিয়ে আমি বললেম– দক্ষিণের হাওয়া দিল কোথা থেকে, গাছটার ডাল ছেয়ে গেল ফুলে, ওর মজ্জার ভিতর দিয়ে কী মায়ামস্ত্রের অদৃপ্ত প্রবাহ বয়ে যায় যাতে ঐ রূপের গন্ধের ভোজবাজি চলতে থাকে । ভিতরের থেকে সেই আবেগটা জানতে ইচ্ছা করে বই-কি ! গাছ না হতে পারলে বসস্তে গাছের সেই অপরিমিত রোমাঞ্চ অমুভব করব কী ক’রে । আমার কথা শুনে স্বকুমার উৎসাহিত হয়ে উঠল ; বললে, আমার শোবার ঘরের জানলা থেকে যে শালগাছটা দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার মাথাটা আমি দেখতে পাই ; মনে হয়, ও স্বপ্ন দেখছে ।