পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミぬe রবীন্দ্র-রচনাবলী শালগাছ স্বপ্ন দেখছে শুনে বোধ হয় বলতে যাচ্ছিলে, কী বোকার মতো কথা । বাধা দিয়ে ব’লে উঠলুম, শালগাছের সমস্ত জীবনটাই স্বপ্ন। ও স্বপ্নে চলে এসেছে বীজের থেকে অস্কুরে, অঙ্কুর থেকে গাছে। পাতাগুলোই তো ওর স্বপ্নে-কওয়া কথা । স্বকুমারকে বললুম, সেদিন যখন সকালবেলায় ঘন মেঘ ক’রে বৃষ্টি হচ্ছিল আমি দেখলুম, তুমি উত্তরের বারান্দায় রেলিঙ ধ'রে চুপ করে দাড়িয়েছিলে । কী ভাবছিলে বলো দেখি । স্বকুমার বললে, জানি নে তো কী ভাবছিলুম। আমি বললুম, সেই না-জানা ভাবনায় ভ’রে গিয়েছিল তোমার সমস্ত মন মেঘেভরা আকাশের মতো । সেইরকম গাছগুলো যে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে, ওদের মধ্যে যেন একটা না-জানা ভাব আছে । সেই ভাবনাই বর্ষায় মেঘের ছায়ায় নিবিড় হয়, শীতের সকালের রৌদ্রে উজ্জল হয়ে ওঠে। সেই না-জানা ভাবনার ভাষায় কচি পাতায় ওদের ডালে ডালে বকুনি জাগে, গান ওঠে ফুলের মঞ্জুরিতে । আজও মনে পড়ে স্বকুমারের চোখ দুটো কিরকম এতখানি হয়ে উঠল । সে বললে, আমি যদি গাছ হতে পারতুম তা হলে সেই বকুনি সিরসির করে আমার সমস্ত গা বেয়ে উঠত আকাশের মেঘের দিকে । তুমি দেখলে মুকুমার আগরট দখল করে নিচ্ছে । ওকে নেপথ্যে সরিয়ে তুমি এলে সামনে । কথা পাড়লে, আচ্ছা, দাদামশায়, এখন যদি সত্যযুগ আসে তুমি কী হতে চা ও । তোমার বিশ্বাস ছিল, আমি ম্যাসটোউন কিম্বা মেগাথেরিয়ম হতে চাইব— কেননা, জীব-ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের প্রাণীদের সম্বন্ধে তোমার সঙ্গে এর কিছুদিন আগেই আলোচনা করেছি। তখন তরুণ পৃথিবীর হাড় ছিল কাচ, পাকা রকম ক’রে জমাট হয়ে ওঠে নি তার মহাদেশ, গাছপালাগুলোর চেহারা ছিল বিশ্বকর্তার প্রথম তুলির টানের। সেইদিনকার আদিম অরণ্যে সেইদিনকার অনিশ্চিত শীতগ্রীষ্মের অধিকারে এই-সব ভীমকায় জন্তুগুলোর জীবযাত্রা চলছে কিরকম করে তা স্পষ্টরূপে কল্পনা করতে পারছে না আজকের দিনের মানুষ, এই কথাটা তোমার শোনা ছিল আমার মুখে। পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম অভিযানের সেই মহাকাব্য-যুগটাকে স্পষ্ট ক’রে জানবার ব্যাকুলত তুমি আমার কথা থেকে বুঝতে পেরেছিলে। তাই আমি যদি হঠাৎ ব’লে উঠতুম ‘সেকালের রোয়াওয়ালা চার-তি-ওয়ালা হাতি হওয়া আমার ইচ্ছে, তা হলে তুমি খুশি হতে । তোমার কাবুলি বেড়াল হওয়ার থেকে এই ইচ্ছে বেশি দূরে পড়ত না, আমাকে তোমার দলে পেতে । হয়তো আমার মুখে