পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে శివరీ আমি বললুম, ঠিক পারবে । আঁকা হয়ে গেলে ভাই, তোমারটা আমি নেব, আমারটা তোমাকে দেব । সেদিন এই পর্যস্ত হল আমাদের আলাপ । এইবার আমাদের সেদিনকার আসরের শেষ কথাটা ব'লে নিই। তুমি চলে গেলে তোমার পায়রাকে ধান খাওয়াতে । স্বকুমার তপনো বসে বসে কী ভাবতে লাগল । আমি তাকে বললুম, তুমি কী ভাবছ বলব ? সুকুমার বললে, বলো দেখি । তুমি ভেবে দেখছ, আরও কী হয়ে যেতে পারলে ভালো হয়— হয়তো প্রথম-মেঘকরা আষাঢ়ের বৃষ্টি-ভেজা আকাশ, হয়তো পুজোর ছুটিতে ঘরমুখো পাল-তোলা পান্সিনেীকোপানি । এই উপলক্ষ্যে আমি তোমাকে আমার জীবনের একটা কথা বলি । তুমি জান ধীরুকে আমি কত ভালোবাসতুম। হঠাৎ টেলিগ্রামে খবর পেলুম তার টাইফয়েড, সেই বিকেলেই চলে গেলুম মুন্সিগঞ্চে তাদের বাড়িতে । সাত দিন, সাত রাত কাটল । সেদিন ছিল অত্যন্ত গরম, রৌদ্র প্রখর । দুরে একটা কুকুর করুণ স্বরে আর্তনাদ করে উঠছিল ; শুনে মন খারাপ হয়ে যায় । বিকেলে রোদ পড়ে আসছে, পশ্চিম দিক থেকে ডুমুরগাছের ছায়া পড়েছে বারান্দার উপরে। পাড়ার গয়লানি এসে জিগেল করলে, তোমাদের পোকাবাবু কেমন আছে গা । আমি বললুম, মাথার কষ্ট, গা-জালা আজ কমেছে। যারা সেবা করছিল তারা আজ কেউ কেউ ছুটি নেবার অবকাশ পেলে । দুজন ডাক্তার রুগি দেখে বেরিয়ে এসে ফিস্ ফিস্ ক’রে কী পরামর্শ করলে ; বুঝলেম, আশার লক্ষণ নয় । চুপ করে বসে রইলুম ; মনে হল, কী হবে শুনে | সায়াহ্নের ছায়া ঘনিয়ে এল । দেখা গেল সামনের মহানিমগাছের মাথার উপরে সন্ধ্যাতরা দেখা দিয়েছে। দূরের রাস্তায় পাট-বোঝাই গোরুর গাড়ির শব্দ আর শোনা ধায় না। সমস্ত আকাশটা যেন ঝিম্ঝিম্ করছে। কী জানি কেন মনে মনে বলছি, পশ্চিম-আকাশ থেকে ঐ আসছে রাত্রিরূপিণী শাস্তি, স্নিগ্ধ, কালো, স্তব্ধ । প্রতিদিনই তো আসে কিন্তু আজ এল বিশেষ একটি মূতি-নিয়ে, স্পর্শ নিয়ে। চোখ বুজে সেই ধীরে-চলে-আসা রাত্রির আবির্ভাব আমার সমস্ত অঙ্গকে মনকে যেন আবৃত করে দিলে। মনে মনে বললুম, ওগো শাস্তি, ওগো রাত্রি, তুমি আমার দিদি, আমার অনাদি কালের দিদি । দিন-অবসানের দরজার কাছে দাড়িয়ে টেনে নাও তোমার বুকের কাছে আমার ধীরুভাইকে ; তার সকল জালা যাক জুড়িয়ে একেবারে – দুই পছর পেরিয়ে গেল ; একটা কাল্লার ধ্বনি উঠল রোগীর শিয়রের কাছ থেকে ; নিস্তব্ধ