পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প శ్రీశ్రీ ఏ জুতোয় মুকতলা বলাবার ভান ক'রে । তার দৃষ্টি রাস্তার লোকদের পায়ের দিকে। তখনকার মতো তাকে আমি ঠাগু করেছিলুম। তার পরে সেই চটি বেরোল বিছানার নীচে থেকে। নীলুর পেয়ারের কুকুর সেটা নিয়ে আনন্দে ছেড়াছেড়ি করেছে। নীলুর সবচেয়ে দুঃখ হল এই চটির সদ্ধান পেয়ে, তার প্রমাণ গেল মারা। কুলমি বললে, আচ্ছা, দাদামশায়, মানুষ এতবড়ো বোকা হয় কী ক’রে । আমি বললুম, অমন কথা বোলো না দিদি, অঙ্কশাস্ত্রে ও পণ্ডিত । অঙ্ক ক’ষে ক'ষে ওর বুদ্ধি এত স্বল্প হয়েছে যে, সাধারণ লোকের চোখে পড়ে না। কুলমি নাক তুলে বললে, ওঁর অঙ্ক নিয়ে কী করছেন উনি। আমি বললুম, আবিষ্কার। চটি কেন হারায় সেটা উনি সব সময়ে খুজে পান না, কিন্তু চাদের গ্রহণ লাগায় সিকি লেকে গু, দেরি কেন হয়, এ তার অঙ্কের ডগায় ধরা পড়বেই । আজকাল তিনি প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন যে, জগতে গ্রহ তারা কোনে জিনিসই ঘুরছে না, তারা কেবলই লাফাচ্ছে। এ জগতে কোটি কোটি উচ্চিংড়ে ছাড়া পেয়েছে । এর অকাট্য প্রমাণ রয়েছে ওর খাতায় । আমি আর কথা কই নে, পাছে সেগুলো বের করতে থাকেন । কুলমি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললে, ওঁর কি সবই অনাস্থষ্টি । খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে উচ্চিংড়ের লাফ মেপে মেপে অঙ্ক কবছেন ! এ না হলে ওঁর এমন দশা হবে কেন। আমি বললুম, ওর ঘরকন্ন ঘুরতে ঘুরতে চলবে না, তিড়িংবিড়িং করে লাফাতে লাফাতে চলবে । কুলমি বললে, এতক্ষণে বুঝলুম, এ লোকটার কলমই বা হারায় কেন, একপাটি চটিষ্ট বা পাওয়া যায় না কেন, আর তুমিই বা কেন ওঁকে এত ভালোবাস । যত পাগলের উপরে তোমার ভালোবাসা, আর তারাই তোমার চার দিকে এলে জোটে । দেখো দিদি, সবশেষে তোমাকে একটা কথা বলে রাখি । তুমি ভাবছ, নীলু লক্ষ্মীছাড়াকে নিয়ে তোমার বউদি রেগেই আছেন। গোপনে তোমাকে জানাচ্ছি— একেবারে তার উন্টো। ওর এই এলোমেলো আলুথালু ভাব দেখেই তিনি মুগ্ধ। আমারও সেই দশা ।