পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిసి রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি তার মুখের দিকে চেয়ে থাকতুম ই ক’রে ; বলতুম, এই বাড়িতেই – কোনখানে আমাকে দেখিয়ে দাও-না । সে বলত, মস্তর না জানলে দেখবে কী করে । আমি বলতুম, মস্তর আমাকে বলে দাও-না। আমি তোমাকে আমার কাচাআম-কাটা ঝিমুকটা দেব। লে বলত, মস্তর বলে দিতে মানা আছে । আমি জিগ্রগেস করতুম, ব’লে দিলে কী হয় । sു. সে কেবল বলত, ও বাবা ! কী যে হয় জানাই হল না – তার ভঙ্গী দেখে গা শিউরে উঠত । ঠিক করেছিলুম, একদিন যখন ইরু রাজবাড়িতে যাবে আমি যাব লুকিয়ে লুকিয়ে তার পিছনে পিছনে । কিন্তু সে যেত রাজবাড়িতে আমি যখন যে তুম ইস্কুলে। একদিন জিগগেস করেছিলুম, অন্য সময়ে গেলে কী হয়। আবার সেই 'ও বাবা’ । পীড়াপীড়ি করতে সাহসে কুলোত না । আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়ে নিজেকে ইরু খুব একটা-কিছু মনে করত । হয়তে একদিন ইস্কুল থেকে আসতেই সে বলে উঠেছে, উঃ, সে কী পেল্লায় কা গু । ব্যস্ত হয়ে জিগেস করেছি, কী কাণ্ড । সে বলেছে, বলব না । ভালোই করত— কানে শুনতুম কী একটা কাগু, মনে বরাবর রয়ে যেত পেলায় কাণ্ড । ইরু গিয়েছে হস্তদস্তর মাঠে, যখন আমি ঘুমোতুম। সেখানে পক্ষীরাজ ঘোড়া চ’রে বেড়ায়, মানুষকে কাছে পেলেই সে একেবারে উড়িয়ে নিয়ে যায় মেঘের মধ্যে । আমি হাততালি দিয়ে বলে উঠতুম, সে তো বেশ মজা । সে বলত, মজা বই-কি ! ও বাবা ! কী বিপদ ঘটতে পারত শোনা হয় নি, চুপ করে গেছি মুখের ভঙ্গী দেখে । ইরু দেখেছে পরীদের ঘরকল্প - সে বেশি দূরে নয়। আমাদের পুকুরের পুব পাড়িতে যে চীনেবট আছে তারই মোটা মোট শিকড়গুলোর অন্ধকার ফাকে ফঁাকে । তাদের ফুল তুলে দিয়ে সে বশ করেছিল। তারা ফুলের মধু ছাড়া আর কিছু খায় না। ইরুর পরী-বাড়ি যাবার একমাত্র সময় ছিল দক্ষিণের বারান্দায় যখন নীলকমল মাস্টারের কাছে আমাদের পড়া করতে বসতে হত । ইক্লকে জিগগেস করতুম, অস্ত সময়ে গেলে কী হয়।