পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা বললেন, আমি রাজার সঙ লেজেই থাকি, এবার সাজব সম্নেলির সঙ। মাথায় লাগালেন জটা, পরলেন কপনি, গায়ে মাখলেন ছাই, কপালে অঁাকলেন তিলক আর হাতে নিলেন কমণ্ডলু আর বেলকাঠের দণ্ড । বোম বোম মহাদেবী ব’লে বেরিয়ে পড়লেন পথে । দেশে দেশে রটে গেল— বাবা পিনাকীশ্বর নেমে এসেছেন হিমালয়ের গুহা থেকে, তার একশো-পচিশ বছরের তপস্যা শেষ হল । রাজা প্রথমে গেলেন অঙ্গদেশে। রাজকন্যা খবর পেয়ে বললেন, ডাকো আমার কাছে । কন্যার গায়ের রঙ উজ্জল খামল, চুলের রঙ যেন ফিঙের পালক, চোখ দুটিতে হরিণের চমকে-ওঠা চাহনি। তিনি বসে বসে সাজ করছেন। কোনো বাদি নিয়ে এল স্বর্ণচন্দন বাট, তাতে মুখের রঙ হবে যেন চাপাফুলের মতো। কেউ বা আনল ভৃঙ্গলাঞ্ছন তেল, তাতে চুল হবে যেন পম্পাসরোবরের ঢেউ। কেউ বা আনল মাকড়সাজাল শাড়ি । কেউ বা আনল হাওয়াহাস্কা ওড়না। এই করতে করতে দিনের তিনটে প্রহর যায় কেটে । কিছুতেই কিছু মনের মতো হয় না। সমেসিকে বললেন, বাবা, আমাকে এমন চোখ-ভোলানো সাজের সন্ধান বলে দাও, যাতে রাজরাজেশ্বরের লেগে যায় ধাধা, কাজকর্ম যায় ঘুচে, কেবল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দিনরাত্রি কাটে । সন্ন্যাসী বললেন, আর-কিছুই চাই না ? রাজকন্যা বললেন, না, আর-কিছুই না । সন্ন্যাসী বললেন, আচ্ছা, আমি তবে চললেম, সন্ধান মিললে নাহয় আবার দেখা দেব । রাজা সেখান থেকে গেলেন বঙ্গদেশে । রাজকন্যা শুনলেন সন্ন্যাসীর নামডাক । প্ৰণাম করে বললেন, বাবা, আমাকে এমন কণ্ঠ দাও, যাতে আমার মুখের কথায় রাজরাজেশ্বরের কান যায় ভরে, মাথা যায় ঘুরে, মন হয় উতলা। আমার ছাড়া আর কারও কথা যেন তার কানে না যায়। আমি যা বলাই তাই বলেন। সন্ন্যাসী বললেন, সেই মন্ত্র আমি সন্ধান করতে বেরলুম। যদি পাই তবে ফিরে এসে দেখা হবে । ব’লে তিনি গেলেন চলে । গেলেন কলিঙ্গে । সেখানে আর-এক হাওয়া অন্দরমহলে । রাজকন্যা মন্ত্রণা করছেন কী ক’রে কাঞ্চী জয় ক’রে র্তার সেনাপতি সেখানকার মহিষীর মাথা হেঁট করে দিতে পারে, আর কোশলের গুমরও তার সহ হয় না। তার রাজলক্ষ্মীকে বাদি ক’রে