পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প · ৩২৩ র্তার পায়ে তেল দিতে লাগিয়ে দেবেন। সন্ন্যাসীর খবর পেয়ে ডেকে পাঠালেন । বললেন, বাবা, শুনেছি সহস্রত্নী অস্ত্র আছে শ্বেতদ্বীপে যার তেজে নগর গ্রাম সমস্ত পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি যাকে বিয়ে করব, আমি চাই তার পায়ের কাছে বড়ো বড়ে রাজবন্দীরা হাত জোড় করে থাকবে, আর রাজার মেয়েরা বন্দিনী হয়ে কেউ বা চামর দোলাবে, কেউ বা ছত্র ধ’রে থাকবে, আর কেউ বা আনবে তার পানের বাট । সন্ন্যাসী বললেন, আর-কিছু চাই নে তোমার ? রাজকন্যা বললেন, আর-কিছুই না । সন্ন্যাসী বললেন, সেই দেশ-জালানো অস্ত্রের সন্ধানে চললেম । সন্ন্যাসী গেলেন চলে । বললেন, ধিক্ । 睡 চলতে চলতে এসে পড়লেন এক বনে । খুলে ফেললেন জটাজুট । ঝরনার জলে স্নান ক’রে গায়ের ছাই ফেললেন ধুয়ে । তখন বেলা প্রায় তিনপ্রহর। প্রখর রোদ, শরীর শ্রাস্ত, ক্ষুধা প্রবল। আশ্রয় খুজতে খুজতে~নদীর ধারে দেখলেন একটি পাতার ছাউনি। সেখানে একটি ছোটো চুলা বানিয়ে একটি মেয়ে শাকপাত চড়িয়ে দিয়েছে রাধবার জন্য। সে ছাগল চরায় বনে, সে মধু জড়ো করে রাজবাড়িতে জোগান দিতে । বেলা কেটে গেছে এই কাজে । এখন শুকনো কাঠ জালিয়ে শুরু করেছে রান্ন । তার পরনের কাপড়খানি দাগপড়া, তার দুই হাতে দুটি শাখা, কানে লাগিয়ে রেখেছে একটি ধানের শিষ। চোখ দুটি তার ভোমরার মতো কালো । স্বান ক’রে সে ভিজে চুল পিঠে মেলে দিয়েছে যেন বাদলশেষের রাত্তির । রাজা বললেন, বড়ো খিদে পেয়েছে । মেয়েটি বললে, একটু সবুর করুন, আমি অন্ন চড়িয়েছি, এখনি তৈরি হবে আপনার জন্য । Ç রাজা বললেন, আর, তুমি কী থাবে তা হলে । সে বললে, আমি বনের মেয়ে, জানি কোথায় ফলমূল কুড়িয়ে পাওয়া যায়। সেই আমার হবে ঢের । অতিথিকে অন্ন দিয়ে যে পুণ্যি হয় গরিবের ভাগ্যে তা তো সহজে জোটে না । রাজা বললেন, তোমার আর কে আছে । মেয়েটি বললে, আছেন আমার বুড়ো বাপ, বনের বাইরে তার কুঁড়েঘর। আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই। কাজ শেষ ক’রে কিছু খাবার নিয়ে যাই তার কাছে । আমার জন্য তিনি পথ চেয়ে আছেন।