পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী তিনি বুঝি পাগল ছিলেন ? হা, যেমন পাগল আমি । তুমি আবার পাগল ? কী-ষে বল তার ঠিক নেই। তার পাগলামির লক্ষণ শুনলে বুঝতে পারবে, আমার সঙ্গে তার আশ্চর্য মিল । কী রকম শুনি । যেমন তিনি বলতেন, জগতে তিনি অদ্বিতীয় । আমিও তাই বলি । তুমি যা বল সে তো সত্যি কথা। কিন্তু, তিনি যা বলতেন তা যে মিথ্যে । দেখো দিদি, সত্য কখনো সত্যই হয় না যদি সকলের সম্বন্ধেই সে না থাটে । বিধাতা লক্ষকোটি মানুষ বানিয়েছেন, তার প্রত্যেকেই অদ্বিতীয়। তাদের ছাচ ভেঙে ফেলেছেন । অধিকাংশ লোকে নিজেকে পাচজনের সমান মনে ক’রে আরাম বোধ করে । দৈবাৎ এক-একজন লোককে পাওয়া যায় যারা জানে, তাদের জুড়ি নেই। মুনশি ছিলেন সেই জাতের মহিষ । দাদামশায়, তুমি একটু স্পষ্ট করে তার কথা বলো-না, তোমার অর্ধেক কথা আমি বুঝতে পারি নে। ক্রমে ক্রমে বলছি, একটু ধৈর্য ধরে। — আমাদের বাড়িতে ছিলেন মুনশি, দাদাকে ফারসি পড়াতেন । কাঠামোট তার বানিয়ে তুলতে মাংসের পড়েছিল টানাটানি। হাড় কখানার উপরে একটা চামড়া ছিল লেগে, যেন মোমজামার মতো । দেখে কেউ আন্দাজ করতে পারত না তার ক্ষমতা কত। না পারবার হেতু এই যে, ক্ষমতার কথাটা জানতেন কেবল তিনি নিজে । পৃথিবীতে বড়ো বড়ো সব পালোয়ান কখনো জেতে কখনো হারে । কিন্তু, যে তালিম নিয়ে মুনশির ছিল গুমর তাতে তিনি কখনো কারও কাছে হটেন নি। তার বিদ্যেতে কারও কাছে তিনি যে ছিলেন কমতি সেটার নজির বাইরে থাকতে পারে, ছিল না র্তার মনে। যদি হত ফারসি পড়া বিস্তে তা হলে কথাটা সহজে মেনে নিতে রাজি ছিল লোকে । কিন্তু, ফারসির কথা পাড়লেই বলতেন, আরে ও কি একটা বিস্তে । কিন্তু, তার বিশ্বাস ছিল আপনার গানে। অথচ তার গলায় যে আওয়াজ বেরোত সেটা চেচানি কিংবা কাহুনির জাতের, পাড়ার লোকে ছুটে আসত বাড়িতে কিছু বিপদ ঘটেছে মনে ক’রে। আমাদের বাড়িতে নামজাদ গাইয়ে ছিলেন বিষ্ণু তিনি কপাল চাপৃড়িয়ে বলতেন, মুনশিজি আমার রুটি মারলেন দেখছি। বিষ্ণুর এই হতাশ ভাবখান দেখে মুনশি বিশেষ দুঃখিত হতেন না— একটু মুচকে হাসতেন মাত্র। সবাই বলত,