পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প ७९१ মুনশিজি, কী গলাই ভগবান আপনাকে দিয়েছেন। খোশনামটা মুনশি নিজের পাওনা বলেই টেকে গুজতেন । এই তো গেল গান । আরও একটা বিস্তে মুনশির দখলে ছিল। তারও সমজদার পাওয়া যেত না। ইংরেজি ভাষায় কোনো হাড়পাকা ইংরেজও তার সামনে দাড়াতে পারে না, এই ছিল তার বিশ্বাস। একবার বক্তৃতার আসরে নাবলে স্বরেন্দ্র বঁাড় জেকে দেশছাড়া করতে পারতেন কেবল যদি ইচ্ছে করতেন। কোনোদিন তিনি ইচ্ছে করেন নি। বিষ্ণুর রুটি বেঁচে গেল, স্বরেন্দ্রনাথের নামও । কেবল কথাটা উঠলে মুনশি একটু মুচকে হাসতেন । কিন্তু, মুনশির ইংরেজি ভাষায় দখল নিয়ে আমাদের একটা পাপকর্মের বিশেষ স্ববিধা হয়েছিল। কথাটা খুলে বলি। তখন আমরা পড়তুম বেঙ্গল একাডেমিতে, ডিক্রূজ সাহেব ছিলেন ইস্কুলের মালিক। তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন, আমাদের পড়াশুনা কোনোকালেই হবে না । কিন্তু, ভাবনা কী । আমাদের বিদ্যেও চাই নে, বুদ্ধিও চাই নে, আমাদের আছে পৈতৃক সম্পত্তি। তবুও তার ইস্কুল থেকে ছুটি চুরি করে নিতে হলে তার চলতি নিয়মটা মানতে হত। কর্তাদের চিঠিতে ছুটির দাবির কারণ দেখাতে হত। সে চিঠি যত বড়ো জালই হোক, ডিক্রূজ সাহেব চোপ বুজে দিতেন ছুটি। মাইনের পাওনাতে লোকসান না ঘটলে তার ভাবনা ছিল না । মুনশিকে জানাতুম ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। মুনশি মুখ টিপে হাসতেন। হবে না ? বাস্ রে, তার ইংরেজি ভাষার কী জোর । সে ইংরেজি কেবল ব্যাকরণের ঠেলায় হাইকোটের জজের রায় ঘুরিয়ে দিতে পারত। আমরা বলতুম, নিশ্চয়! হাইকোর্টের জজের কাছে কোনোদিন তাকে কলম পেশ করতে হয় নি । কিন্তু, সবচেয়ে তার জাক ছিল লাঠি-খেলার কারদানি নিয়ে। আমাদের বাড়ির উঠোনে রোদ্ধর পড়লেই তার খেলা শুরু হত । সে খেলা ছিল নিজের ছায়াটার সঙ্গে । ংকার দিয়ে ঘা লাগাতেন কখনো ছায়াটার পায়ে, কখনো তার ঘাড়ে, কখনো তার মাথায় । আর, মুখ তুলে চেয়ে চেয়ে দেখতেন চার দিকে যারা জড়ো হত তাদের দিকে । সবাই বলত, লাবাস্ ! বলত, ছায়াটা ষে বতিয়ে আছে সে ছায়ার বাপের ভাগ্যি । এই থেকে একটা কথা শেখা যায় যে, ছায়ার সঙ্গে লড়াই ক’রে কখনো হার হয় না। আর-একটা কথা এই যে, নিজের মনে যদি জানি ‘জিতেছি? তা হলে সে জিত কেউ কেড়ে নিতে পারে না। শেষ দিন পর্যন্ত মুনশিজির জিত রইল। সবাই বলত ‘লাবাস, আর মুনশি মুখ টিপে ছাসতেন। দিদি, এখন বুঝতে পারছ, ওর পাগলামির সঙ্গে আমার মিল কোথায় । আমিও