পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গরসর \LLL পরী কুলমি বললে, তুমি বড্ড বানিয়ে কথা বল। একটা সত্যিকার গল্প শোনাও-না ! আমি বললুম, জগতে দুরকম পদার্থ আছে। এক হচ্ছে সত্য, আর হচ্ছে— আরও-সত্য । আমার কারবার আরও-সত্যকে নিয়ে । দাদামশায়, সবাই বলে, তুমি কী যে বল কিছু বোঝাই যায় না। আমি বললুম, কথাটা সত্যি, কিন্তু যারা বোঝে না সেটা তাদেরই দোষ । আরও-সত্যি কাকে বলছ একটু বুঝিয়ে বলো-না। আমি বললুম, এই যেমন তোমাকে সবাই কুসমি বলে জানে । এই কথাটা খুবই সত্য ; তার হাজার প্রমাণ আছে । আমি কিন্তু সন্ধান পেয়েছি যে, তুমি পরীস্থানের পরী । এটা হল আরও-সত্য । খুশি হল কুলমি। বলল, আচ্ছা, সন্ধান পেলে কী করে। আমি বললুম, তোমার ছিল একজামিন, বিছানার উপরে বসে বসে ভূগোলবৃত্তাস্ত মুখস্থ করছিলে, কখন তোমার মাথা ঠেকল বালিশে, পড়লে ঘুমিয়ে। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত্রি। জানলার ভিতর দিয়ে জ্যোৎস্না এসে পড়ল তোমার মুখের উপরে, তোমার আসমানি রঙের শাড়ির উপরে। আমি সেদিন স্পষ্ট দেখতে পেলুম, পরীস্থানের রাজা চর পাঠিয়েছে তাদের পলাতক পরীর খবর নিতে। সে এসেছিল আমার জানলার কাছে, তার সাদা চাদরটা উড়ে পড়েছিল ঘরের মধ্যে । চর দেখল তোমাকে আগাগোড়া, ভেবে পেল না তুমি তাদের সেই পালিয়ে-আসা পরী কি না। তুমি এই পৃথিবীর পত্নী বলে তার সন্দেহ হল। তোমাকে মাটির কোল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সহজ হবে না । এত ভার সইবে না । ক্রমে চাদ উপরে উঠে গেল, ঘরের মধ্যে ছায়া পড়ল, চর শিশুগাছের ছায়ায় মাথা নেড়ে চলে গেল । সেদিন আমি খবর পেলুম, তুমি পরীস্থানের পরী, পৃথিবীর মাটির ভারে বাধা পড়ে গেছ । কুলমি বললে, আচ্ছা দাদামশায়, আমি পরীস্থান থেকে এলুম কী করে । আমি বললুম, সেখানে একদিন তুমি পারিজাতের বনে প্রজাপতির পিঠে চড়ে উড়ে বেড়াচ্ছিলে, হঠাৎ তোমার চোখে পড়ল দিগন্তের ঘাটে এসে ঠেকেছে একটা খেয়ানৌকো। সেটা সাদা মেঘ দিয়ে গড়া, হাওয়া লেগে দুলছে। তোমার কী মনে হল, তুমি উঠে পড়লে সেই নৌকোয় । নৌকো চলল ভেলে, ঠেকল এসে পৃথিবীর