পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাচস্পতি দাদামশায়, তুমি তোমার চার দিকে যেসব পাগলের দল জমিয়েছিলে, গুণ হিসেব ক’রে তাদের বুঝি সব নম্বর দিয়ে রেখেছিলে ? হ্যা, তা করতে হয়েছে বই-কি । কম তো জমে নি । তোমার পয়লা নম্বর ছিলেন বাচস্পতি মশায়, তাকে আমার ভারি মজা লাগে । আমার শুধু মজা লাগে না, আশ্চর্ষ লাগে। কারণ বলি– কবিতা লিখে থাকি । কথা বাকানো-চোরানো আমাদের ব্যাবসা । যে শব্দের কোনো সাদা মানে আছে তাকে আমরা ধ্বনি লাগিয়ে তার চেহারা বদল করি । সে এক রকমের জাদুবিদ্যা বললেই হয় । কাজটা সহজ নয় । আমাদের বাচস্পতি আমাকে আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন যখন দেখলুম তিনি একেবারে গোড়াগুড়ি ভাষা বানিয়েছেন । কান দিয়ে ধ্বনির রাস্তায় তার মানের রাস্তা খুজতে হয়। আমাদের কাজটাও অনেকটা তাই, কিন্তু এতদূর পর্যন্ত নয়। আমরা তবু ব্যাকরণ অভিধান মেনে চলি । বাচস্পতির ভাষা চলত সে-সমস্তই ডিঙিয়ে । শুনলে মনে হত যেন কী একটি মানে আছে !— মানে ছিল বই-কি । কিন্তু, সেটা কানের সঙ্গে ধ্বনি মিলিয়ে আন্দাজ করতে হত । আমার ‘অস্তুত-রত্নাকর সভার প্রধান পণ্ডিত ছিলেন বাচস্পতি মশায় । প্রথম বয়সে পড়াশুনা করেছিলেন বিস্তর, তাতে মনের তলা পর্যন্ত গিয়েছিল ঘুলিয়ে । হঠাৎ এক সময়ে তার মনে হল, ভাষার শব্দগুলো চলে অভিধানের আচল ধ'রে । এই গোলামি ঘটেছে ভাষার কলিযুগে। সত্যযুগে শব্দগুলো আপনি উঠে পড়ত মুখে । সঙ্গে সঙ্গেই মানে আনত টেনে । তিনি বলতেন, শব্দের আপন কাজই হচ্ছে বোঝানো, তাকে আবার বোঝাবে কে। একদিন একটা নমুনা শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন । বললেন, আমার নায়িকা যখন নায়ককে বলেছিল হাত নেড়ে ‘দিন রাত তোমার ঐ ছিদহিদ হিদিক্কারে আমার পাজজুরিতে তিড়িতঙ্ক লাগে’, তখন তার মানে বোঝাতে পণ্ডিতকে ডাকতে হয় নি। যেমন পিঠে কিল মেরে সেটাকে কিল প্রমাণ করতে মহামহোপাধ্যায়ের দরকার হয় না । সভাপতি একদিন বিষয়টা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ওহে বাচস্পতি, সেই ছেলেটার কী नञ1 झल । বাচস্পতি বললেন, সে ছেলেটার বুঝকিন গোড়া থেকেই ছিল বুঝতুমূল গোছের।