পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8や রবীন্দ্র-রচনাবলী সাধারণ লোকের বুদ্ধিতে মিল হয়, অসাধারণ পাগলের মিল হয় না। তোমাকে একটা উদাহরণ দেখাই ।— আমার দলে একজন পাগল ছিল, তার নাম ত্রিলোচন দাস । সে তিন ক্রোশ পথ না ঘুরে কখনো বাড়ি যেত না । জিজ্ঞাসা করলে বলত, বাবা, যমের চর চার দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের ফাকি দিতে না পারলে রক্ষে নাই । জান তো, আমার বাবা ছিলেন কী রকম একগুঁয়ে মাহুষ ? পাগল বললেই হয়। কোনোমতেই আমার পরামর্শ মানতেন না । বরাবর তিনি সিধে রাস্তায় বাড়ি গিয়েছেন— তার পরে জান তো ? আজ তিনি কোথায় । আর, আমি আজ সাত বছর ধরে পশ্চিমমুখে রাস্তা ধরে আমার পুবের দিকের বাড়িতে যাই । কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি, ভোজুমণ্ডলের বাড়িতে আমার পুজোর Cनु ! জগতে যত বুদ্ধিমান আছে সকলেই সিধে রাস্তায় বাড়ি যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কেবল একজন আছে যে বাড়ি যেতে তিন ক্রোশ পথ বেঁকে যায়। আমার দুইনম্বরের কথা শোনো ; সে বাচস্পতির কথা শুনে বলত, আহা, লোকট। একেবারে বেহেড হয়ে গেছে । আর, বাচস্পতি তার কথা শুনে মুখ টিপে হাসতেন ; বলতেন, এই লোকটার মগজে আছে বুজগুস্কুলের বাসা । প্রেসিডেন্ট, বললেন, কী হে হাজরা, তোমার বাড়ির হয়েছিল কী । এতকালের পৈতৃক ঘরটা পথের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিলে। এমন দৌড় মারলে, কোনো চিহ্ন রাখলে না কোথাও । বল কী — আঞ্জে হ্যা মহারাজ। কলকাতায় হয়েছি মাহব, বাবার মৃত্যুর পর কিছু টাকা এল হাতে। ঠিক করলেম, পৈতৃক ভিটেট একবার দেখে আসা দরকার। সেই ভিটের কথা এইটুকু মাত্র জানতুম— পাচকুণ্ডু গ্রামে ছিল তার ভিত, ভোজুঘাটার সাড়ে সাত ক্রোশ তফাতে । শুভদিন দেখে নেীকো করে পৌঁছলাম ভোজুঘাটায় । কেউ ঠিকানা বলতে পারলে না। চললেম খুঁজে বের করতে, মুদির দোকান থেকে চিড়ে মুড়কি নিলুম বেঁধে । সাত ক্রোশ পার হতে বাজল রাত্তির ন’টা । চার দিকে পোড়ে জমি, আগাছায় জঙ্গল, ভিটের কোনো চিহ্ন নাই। বারবার স্বাওয়া-আসা করেছি, ভিটে খুজে পাই নে। রাস্তার দোকানি আমাকে দেখে কী ভাবলে কে