পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

О6 е রবীন্দ্র-রচনাবলী রক্তের মিশল ঘটেছে । পরাক্রম বললেন, কথাটা সত্য হতেও পারে, সেইজন্তেই তোমার মতো উচ্চ কুলের রক্ত মিশল ক’রে আমার বংশের রক্ত শুধরে নেবার জন্তে এতদিন চেষ্টা করেছি। আজ স্বযোগ এল । তোমার মানহানি করব না। বন্দী করে রাখতে চাই নে, ছাড়া থাকবে । একটা কথা মনে রেখো, এই বন থেকে বেরোবার রাস্তা না জানলে কারোর সাধিা নেই এখান থেকে পালায়। মিছে চেষ্টা কোরো না, আর যা ইচ্ছা করতে পার । রাত্রি অনেক হয়েছে। অরিজিতের ঘুম নেই, বসেছেন এসে কাশিনী নদীর ঘাটে বটগাছের তলায়। এমনসময় একটি মেয়ে, মুখ ঘোমটায় ঢাকা, তাকে এসে বললে, আমার প্রণাম নিন। আমি এখানকার সর্দারের মেয়ে । আমার নাম রঙনকুমারী। আমাকে সবাই চন্দনী ব’লে ডাকে । আপনার সঙ্গে পিতাজি আমার বিবাহ অনেক দিন থেকে ইচ্ছা করেছেন। শুনলেম, আপনি রাজি হচ্ছেন না । কারণ কী বলুন আমাকে। আপনি কি মনে করেন আমি অস্পৃষ্ঠ । অরিজিং বললেন, কোনো মেয়ে কখনো অস্পৃহ হয় না, শাস্ত্রে বলেছে । তবে কি আমাকে দেখতে ভালো নয় ব’লে আপনার ধারণ: | তাও নয়, আপনার রূপের স্বনাম আমি দূর থেকে শুনেছি। তবে আপনি কেন কথা দিচ্ছেন ন! । অরিজিং বললেন, কারণটা খুলে বলি । করঞ্জরের রাজকন্ত নির্মলকুমারী আমার বহুদূর-সম্পর্কের আত্মীয়া । তার সঙ্গে ছেলেবেলায় একসঙ্গে খেল করেছি। তিনি আজ বিপদে পড়েছেন। মুসলমান নবাব তার পিতার কাছে তার জন্তে দূত পাঠিয়েছিলেন । পিত। কস্ত দিতে রাজি না হওয়াতে যুদ্ধ বেধে গেল । আমি তাকে বঁচিয়ে আনব, ঠিক করেছি। তার আগে আর-কোথাও আমার বিবাহ হতে পারবে না, এই আমার পণ। করঞ্জর রাজ্যটি ছোটো, রাজার শক্তি অল্প । বেশি দিন যুদ্ধ চলবে না জানি, তার আগেই আমাকে যেতে হবে । চলেছিলেম সেই রাস্তায়, পথের মধ্যে তোমার পিতা আমাকে ঠেকিয়ে রাখলেন। কী করা যায় তাই ভাবছি। মেয়েটি বললে, আপনি ভাববেন না। এখান থেকে আপনার পালাবার বাধা হবে না, আমি রাস্তা জানি। আজ রাত্রেই আপনাকে বনের বাহিরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেব। কিছু মনে করবেন না, আপনার চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে হবে, কেননা এ বনের পথের সংকেত বাইরের লোককে জানতে দিতে চপ্তেশ্বরীদেবীর মানা আছে ; তা ছাড়া আপনার হাতে পরাব শিকল । তার যে কী দরকার পথেই জানতে পারবেন।