পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প ·ථOS অরিজিৎ চোখবাধ হাতবাধা অবস্থায় ঘন বনের মধ্যে দিয়ে চন্দনীর পিছন-পিছন চললেন । সে রাত্ৰে ভাৰণতের দল সবাই ভাঙ খেয়ে বেইোশ । কেবল পাহারায় যে সর্দার ছিল সেই ছিল জেগে । সে বললে, চন্দনী, কোথায় চলেছ । চন্দনী বললে, দেবীর মন্দিরে । # ওই বন্দীটি কে । বিদেশী, ওকে দেবীর কাছে বলি দেব । তুমি পথ ছেড়ে দাও । সে বললে, একলা কেন । দেবীর আদেশ, জার-কাউকে সঙ্গে নেওয়া নিষেধ । ওরা বনের বাইরে গিয়ে পৌছল, তপন রাত্রি প্রায় হয়েছে ভোর । চন্দনী অরিজিৎকে প্রণাম করে বললে, আপনার আর ভয় নেই । এই আমার কঙ্কণ, নিয়ে যান, দরকার হলে পথের মধ্যে কাজে লাগতে পারে । অরিজিৎ চললেন দূরপথে । নানা বিশ্ন কাটিয়ে যতই দিন যাচ্ছে ভয় হতে লাগল, সময়মত হয়তো পৌছতে পারবেন না । বহুকষ্টে করঞ্চর রাজ্যের যখন কাছাকাছি গিয়েছেন খবর পেলেন, যুদ্ধের ফল ভালো নয় । দুর্গ বাচাতে পারবে না। আজ হোক, কাল হোক, মুসলমানের দখল করে নিতে পারবে তাতে সন্দেহ নেই । অরিজিৎ আহারনিদ্রা ছেড়ে প্রাণপণে ঘোড়া ছুটিয়ে যখন দুর্গের কাছাকাছি গিয়েছেন, দেখলেন, সেখানে আগুন জলে উঠেছে। বুঝলেন মেয়েরা জহরত্ৰত নিয়েছে । হার হয়েছে তাই সকলে চিতা জালিয়েছে মরবার জন্তে । অরিজিং কোনোমতে দুর্গে পৌছলেন । তখন সমস্ত শেষ হয়ে গিয়েছে । মেয়ের আর কেউ নেই । পুরুষরা তাদের শেষ লড়াই লড়ছে । নির্মলকুমারী রক্ষণ পেল কিন্তু সে মৃত্যুর হাতে, তার হাতে নয় এই দুঃখ । ভথন মনে পড়ল চন্দনী তাকে বলেছিল, তোমার কাজ শেষ হয়ে গেলে পর তোমাকে এপানেই ফিরে আসতে হবে , সেজন্তে, যতদিন হোক, আমি পথ চেয়ে থাকব । তার পর দুষ্ট মাস চলে গেল । ফাস্তনের শুক্লপক্ষে অরিজিৎ সেই বনের মধ্যে পৌছলেন । শাখ বেজে উঠল, সানাই বাজল, সবাই পরল নতুন পাগড়ি লাল রঙের, গায়ে ওড়াল বালন্তীরঙের চাদর । শুভলগ্নে অরিজিতের সঙ্গে চন্দনীর বিবাহ হয়ে গেল । এই পর্যন্ত হল আমার গল্প । তার পরে বরাবরকার অভ্যাসমত শোবার ঘরের কেদারায় গিয়ে বললুম। বাদলার হাওয়া বইছিল। বৃষ্টি হবে-হবে করছে। স্বধাকান্ত দেখতে এলেন, দরজা জানালা ঠিকমতো বন্ধ আছে কি না । এলে দেখলেন, আমি কেদারায় বলে আছি । ডাকলেন, কোনো উত্তর নেই। স্পর্শ করে বললেন, ঠাও। રે ૭૨૭