পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

එIV রবীন্দ্র-রচনাবলী 款 ভালোমানুষ ছিঃ, আমি নেহাত ভালোমাকুব । কুলমি বললে, কী যে তুমি বল তার ঠিক নেই। তুমি যে ভালোমানুষ সেও কি বলতে হবে । কে না জানে, তুমি ও পাড়ার লোটনগুণ্ডার দলের সর্দার নও। ভালোমানুষ তুমি বল কাকে । এইবার ঠিক প্রশ্নটা এসেছে তোমার মুখে । ভালোমানুষ তাকেই বলে যে অস্তায়ের কাছেও নিজের দখল ছেড়ে দেয়, দরজি হাতের গুণে নয়, মনের জোর নেই বলেই । যেমন ? যেমন আজই ঘটেছিল সকালে । বেশ একটুখানি গুছিয়ে নিয়ে লিখতে বসেছিলুম, এমনসময় এসে হাজির পাচকড়ি । একেবারে সাহার থেকে সিমুম হাওয়া বয়ে গেল, শুকিয়ে গেল মনের মধ্যে যা-কিছু ছিল তাজা । ঐ একটি প্রাণী বিধাতার কারখানা থেকে বাকী হয়ে বেরিয়েছিল, কোনো মাহুষের সঙ্গে কোনোখানেই জোড় মেলে না । এক সময়ে ক্যালকাটাকে উচ্চারণ করেছিল কালকূটা, সেই অবধি সবাই ওকে ডাকত কালোকুত্তা। শুনতে শুনতে সেটা ওর কানে সয়ে গিয়েছিল। ইস্কুলে কেউ ওকে দেখতে পারত না । একদিন আমাদের রমেন ‘রাস্কেল’ ব’লে ঘাড়ের উপর পড়ে ঘুষিয়ে ওর নাক বাকিয়ে দিয়েছিল ; ব’লে রেখেছিল, এর পরের বারে কনি দেবে বঁকি ক'রে । এসেই সে বলল আমার লেখাপড়া করার চৌকিটাতে । ভালোমানুষের মুখ দিয়ে বেরোল না, ওখানে আমি কাজ করব । ডেস্কের উপর বুকে যেন অন্তমনে এটা ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল । বললে দোষ হত না যে, ওগুলো দরকারি জিনিস, ঘাটাঘাটি কোরো না । কিন্তু— কী আর বলব। বললে, অনেককাল দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। শুরু করলে, আহা আমাদের সেই ইস্কুলের দিন ছিল কী স্বখের । গল্প লাগালে খোড়া গোবিন্দ ময়রার । দেখি, আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে আমার সোনাবাধানো ফাঊেন্টন-পেনট, চাদরের আড়ালে ওর পকেটের দিকে । বললেই হত, ভুল করছ, কলমটা তোমার নয়, ওটা আমার । কিন্তু, আমি যে ভালোমাছুষ, ভদ্রলোকের ছেলে— এতবড়ো লজ্জার কথা ওকে বলি কী ক’রে । ওর চুরিকরা হাতটার দিকে চাইতেই পারলুম না । সন্দেহ করছি লোকটা ব'লে বসবে, আজ এখানেই খাব । বলতে পারব না, না, সে হবে না । ভাবতে ভাবতে ঘেমে উঠেছি। হঠাৎ